জাতীয়

সংবিধান সংস্কার

তত্ত্বাবধায়ক সরকার,দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ বিএনপির ‘একগুচ্ছ’ প্রস্তাব

বিএনপির দলীয় প্রতীক ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের  অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনে জমা দেওয়ার  জন্য বিএনপি ‘একগুচ্ছ’ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের আলোকেই সংবিধানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করছে।

বিএনপির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা অন্যতম।  

বৃহস্পতিবার(২১ নভেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।দলের এসব সংস্কার প্রস্তাবনা আগামী সোমবারের মধ্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেওয়া হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ বিভাগের সংস্কারে দলীয় প্রস্তাবও অনেকটা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এ ছাড়া দলীয় অন্য সংস্কার কমিটিগুলোর কাজের অগ্রগতির বিষয় ছাড়াও সংবিধান সংস্কারসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত অন্যান্য কমিশনের সংস্কার নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তায় দলের পক্ষ থেকে আরও দুটি নতুন কমিটি গঠনের বিষয়েও হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন নেতারা।

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব কমিটি যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছে। এর মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার- এই তিন বিষয়কে সংবিধানের মূলনীতি ঘোষণা করা, আনুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতিতে না যাওয়ার প্রস্তাব থাকছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করা, এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা- এসব প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিএনপির ৩১ দফায়। তবে এসব বিষয়ে বিএনপির নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ তার প্রতিবেদন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনও প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। যথাক্রমে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আবদুল মঈন খান দুই কমিটির প্রধান।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে,  দলের সংস্কার কমিটিগুলোর তৈরি করা প্রতিবেদন বা প্রস্তাবগুলো সরকারের চাওয়া অনুযায়ী ছয় সংস্কার কমিশনের কাছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার ও নারীবিষয়ক আরও দুটি সংস্কার কমিটি গঠনের পরামর্শ আসে। এর একটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আরেকটিতে সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

সরকারের সূত্রগুলো বলছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, নারীবিষয়ক এবং গণমাধ্যম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার আরও চারটি কমিশন গঠন করে বৃহস্পতিবার।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন