মহান বিজয় দিবস
সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের অপার আনন্দের দিন আজ
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের/সেই সোনালি অক্ষর/দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই/স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে/পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান—কবি মহাদেব সাহার ‘বিজয়ের কবিতা’র মতো আজ বিজয় দিবস। আজ সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। আজ পুরো বাংলাদেশের জনগণের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করার দিন।
যেকোনো ক্ষেত্রে বিজয়ের মালা পরা অবশ্যই আনন্দের দিন। তবে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পথ বেয়ে আর মরণপণ করে সশস্ত্র যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের যে বিজয় তার কোনো তুলনা নেই। বিশ্বের মানচিত্রে একটি দেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার আনন্দ পৃথিবীর অন্য সব আনন্দের চাইতে মধুর।
আজ জাতির জন্য চিরগৌরবময় অবিস্মরণীয় এক দিন। স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ও পৃথিবীর মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আলোকোজ্জ্বল দিন আজ। একই সঙ্গে এদিনটি বেশ বেদনারও। দেশ-জাতিকে পরাধীনতার নিগড়মুক্ত করতে ত্রিশ লাখ বীর সন্তান অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। অগণিত মা-বোন তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। জানমালের ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। কৃতজ্ঞ জাতি আজ এই বিজয়ের আনন্দের দিনে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে আত্মদানকারী সেই শহীদদের। স্মরণ করবে সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজধানীসহ সারা দেশের সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার, জাতীয় পতাকার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করবে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পতাকা ও ফুল হাতে নামবে অগণিত মানুষের ঢাল।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণীতে রাষ্ট্রপতি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ—মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বাণী: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণীতে বলেন, বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।
‘বিজয় দিবস ২০২৪’-এর সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। এদিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় এবং স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে। আমাদের দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপি: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ি, সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর ছাড়া সারাদেশের সব জেলা ও মহানগরে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
বিজেপি:মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীতে ‘বিজয় র্যালি’ করবে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। এই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে,
সোমবার বিকাল ৩ টা থেকে র্যালিটি কামাল আতাতুর্ক রোড বনানী পূজা মন্ডপ মাঠ হতে গুলশান -২ ডিসিসি মার্কেটে এসে শেষ হবে। র্যালির নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে “বিজয় র্যালি” করার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
ওই পোস্টে বলা হয়, “১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজন ‘বিজয় র্যালি’। জমায়েত হবে সকাল ১০টায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সবাইকে নিমন্ত্রণ।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির: মহান বিজয় দিবসে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করবে বাংলাদেশ ইসলামী ছঅত্র শিবির ঢাকা মহানগর শাখা। রোববার সংগঠনটির ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম (উত্তর গেট) থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। র্যালিতে উপস্থিত থাকবেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।
এছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় মাহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করবে।
এমআর//