দেশজুড়ে

মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনায় জড়িতরা শনাক্ত হলেও ধরা পড়েননি কেউ

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে  আবদুল হাই  ওরফে কানু  নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের  শনাক্ত করেছে পুলিশ।  জড়িতদের মধ্যে কাউকে আটক করতে না পারলেও তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান গণমাধ্যমকে বলেন, লাঞ্ছিত করার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের  ভিডিও দেখে শনাক্ত করা গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা থানায় এসেছেন, তারা জানতে চেয়েছেন, নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা মামলা দিলে পুলিশ গ্রহণ করবে কি না। তিনি বলেছেন, মামলা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যে দলেরই হোন না কেন, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তারা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের নির্দেশনা পেয়েছেন বলেও জানান।

এর আগে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে লাঞ্ছিত করেন একদল লোক। সেই রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, জুতার মালা পরা অবস্থায় আবদুল হাই নামের ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দুজন ব্যক্তি টানাহেঁচড়া করছেন। তাকে লাঞ্ছিত করা ব্যক্তিদের একজনই পুরো ঘটনার ভিডিও করেছেন। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু বারবার তাকে ছেড়ে দেয়ার আকুতি জানান।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, তার বাবাকে নির্যাতনকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি করেন। ভিডিওতে তাদের সবাইকে দেখা গেছে। জুতার মালা পরানোর পর যে দুজন তার বাবার দুই হাত ধরে টানাহেঁচড়া করেছেন এরা হলেন কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম ও অহিদুর রহমান। তাদের দুজনই জামায়াতের সমর্থক। লাঞ্ছিতকারীরা কমপক্ষে ২০ জন ছিলেন। আবুল হাশেম ও অহিদুরের সঙ্গে এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের কর্মী-সমর্থক পেয়ার আহমেদ, রাসেল, শহীদ, এমরান হোসেন, ফরহান হোসেন, কামরান হোসেনসহ কয়েকজন।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল বলেন, ‘আবদুল হাই কানু মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী’।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার প্রমথ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বিজয়ের মাসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তারা অবাক হয়েছেন। তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করবেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধারা। অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে। এ ঘটনায় পুরো জাতি আজ লজ্জিত।

লাঞ্ছিত করার বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আবুল হাশেম তাদের দলের কোনো পদে নেই। ঘটনাস্থলে কোনো সমর্থক কিংবা অনুসারী হয়তো থাকতে পারেন, কিন্তু কোনো নেতা–কর্মী সেখানে ছিলেন না। এ ছাড়া এ ঘটনা কোনো রাজনৈতিক বিষয় না। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে জামায়াতের বিষয়ে যেভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে, তার নিন্দাও জানান তিনি।

জেডএস/ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন