কানাডার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনীতা আনন্দ!
বেশ কয়েক দিন ধরেই জল্পনা জোরেসোরেই চলছিল। অবশেষ সেই জল্পনা সত্যি হল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। নিজের দলেই কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। শুধু প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে নয়। ‘লিবারেল পার্টি’র নেতা হিসেবেও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন ৫৩ বছর বয়সী এই নেতা।
তবে সদ্য সাবেক হওয়া প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তরসূরি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অফিস ছাড়বেন না তিনি। এমনকি আসছে মার্চের মাসের শেষ পর্যন্ত দেশের সংসদ মুলতুবিরও ঘোষণা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো।
জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পরই দলের প্রধান হিসেবে দল ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন মুখের খোঁজে নেমে পড়েছেন লিবারেল পার্টির নেতারা। বেশ কয়েকজন নতুন মুখের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। দলের প্রধান ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন মুখের তালিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক নারীও রয়েছেন।
কানাডার ফেডারেল পরিবহনমন্ত্রী অনীতা আনন্দের সম্ভাবনা রয়েছে জাস্টিন ট্রুডোর উত্তরসূরি হওয়ার। কানাডার রাজনীতিতে বেশ প্রাসঙ্গিক মুখ তিনি। অনীতার বাবা তামিলনাড়ু ও মা পঞ্জাবের। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে কানাডার লিবারেল পার্টির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম ওকভিলের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কানাডার পাবলিক সার্ভিস ও প্রকিউরমেন্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলিয়েছেন অনীতা। পরবর্তীতে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। রদবদলের জেরে পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আন্তর্জাতিক ট্রেজারি বোর্ডের গুরুদায়িত্ব পান । এরপর তিনি দায়িত্ব পান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের। আপাতত ট্রুডোর উত্তরসূরি হিসাবে দলের নজর নাকি তাঁর দিকেই, দাবি একাংশের।
শুধু অনীতা আনন্দই নয়, দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন লিবারেল পার্টির আরও একাধিক হেডিওয়েট নেতা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলিসহ রয়েছেন লিবারেল পার্টির ট্রুডোর মন্ত্রিসভা সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেত্রী পদত্যাগ করা উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। এছাড়াও রয়েছেন, কানডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক-ব্যাঙ্ক অব কানাডার সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নিও।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে ভারত বিদ্বেষ এবং খালিস্তান প্রেমের জন্য ক্রমেই নিজের দলের ভিতরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন সদ্য সাবেক হওয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।নিজ দলের সাংসদরা প্রকাশ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এক মাস আগেই ট্রুডোর উপরে অসন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।
২০২৫ সালের অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রুডো।তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে পড়েন তিনি, যা তাকে আরও বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্ষমতা গ্রহণ করেই কানাডার পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা নিয়ে মতভেদের জেরে গেলো ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন অর্থমন্ত্রী উপ প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় প্রথম 'প্রকাশ্য' বিদ্রোহের ঘটনা।
ক্রিস্টিয়া ছিলেন ট্রুডোর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। তিনি ট্রুডোর দেওয়া ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করার পর তাঁর বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ট্রুডো দেশের জন্য ভালো কিছু করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ‘রাজনৈতিক ছলচাতুরী’র আশ্রয় নিচ্ছেন। তার এই চিঠিটি দলের ভেতর ট্রুডোকে সরানোর জন্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে প্রথমদিকে কিন্তু ট্রুডো ‘অবস্থা’ এমন ছিল না। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তবে তাঁর ন’বছরের শাসনকালে বিদেশ নীতির ‘মূল মন্ত্রই’ ছিল ভারত-বিদ্বেষ। কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ককে নিজের কবজায় রাখার জন্য খলিস্তানিদের সাহায্য করেছেন। এরপর দলের অন্দরে ক্রমেই বাড়ছিল অসন্তোষ। ২০২৫-এর অক্টোবরে কানাডায় হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালাবেন ট্রুডো-এমনটি কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।
এমআর//