লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল: পানি সরবরাহ ও ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যর্থতার পেছনের রহস্য কী?
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে গত ৭ জানুয়ারি থেকে চলছে দাবানলের তাণ্ডব। এ পর্যন্ত আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনী এবং প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বর্তমান অবস্থা
দাবানলে ১৬,৩০০ হেক্টর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং ১২,৩০০টিরও বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার বন ও আগুন নিয়ন্ত্রণ বিভাগ (কল ফায়ার) জানিয়েছে, বর্তমানে তিনটি বড় দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রশান্ত প্যালিসেডের দাবানল সবচেয়ে ভয়াবহ, যার মাত্র ১৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এটনের দাবানলে আলটাডেনা অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটি ২৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। হ্রাস্ট দাবানলের ৮৯ শতাংশ দমকলকর্মীরা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধান চ্যালেঞ্জ
দাবানল নেভাতে সান্তা আনা বাতাস এবং শুষ্ক পরিস্থিতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড বাতাসের কারণে হেলিকপ্টারগুলোর ঘটনাস্থলে যাওয়া বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে আন্তর্জাতিক দমকলকর্মীদের সংস্থার দাবানল/শহরকেন্দ্রীক কর্মসূচির সমন্বয়ক জো টেন আইক জানিয়েছেন, বাতাস এতটাই শক্তিশালী যে কিছু হেলিকপ্টারকে গত সপ্তাহে ভূমিতে নামিয়ে রাখা হয়েছিল।
পানি সংকট
দাবানল নিয়ন্ত্রণে পানির অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাবানল শুরুর আগে ১১৪টি ট্যাঙ্কে পানি সরবরাহ করা হলেও পরে তিনটি ট্যাঙ্কে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। লস অ্যাঞ্জেলেসের পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, দাবানলের সময় পানির চাহিদা প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়, যার ফলে পানির ট্যাঙ্কগুলো দ্রুত শূন্য হয়ে পড়ে। ১০ জানুয়ারি পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোর ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেন। ১৫ ঘণ্টা ধরে স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় ৪ গুণ পানি খরচ হয়েছে। যার ফলে পানির চাপ কমে যায়। গত মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) প্রশান্তমহাসাগরীয় প্যালেসেডে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা দাবানল শুরু হয়। ওই দিনই ১০ লাখের দুটি পানি ভর্তি ট্যাঙ্গ মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়।
হাইড্রেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই একটি বাড়িতে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে হাইড্রেন্ট ব্যবহার করা হয়ে। কিন্তু শত শত বাড়ির আগুন হাইড্রেন্টের পানির দ্বারা নেভানো সম্ভব নয়।
ফায়ার ফাইটারদের প্রচেষ্টা
দাবানল নেভাতে ১৪ হাজার ফায়ার ফাইটার কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে উদ্ধারকর্মীরা এসে তাদের সহায়তা করছেন। মোট ১,৪০০ ফায়ার ইঞ্জিন এবং ৮৪টি এয়ারক্রাফট এ প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসম পানি সংকটের কারণ খুঁজে বের করতে স্বাধীনভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এসি//