৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস !
ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আজ কাতারে বৈঠক
ইসরাইল ফিলিস্তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনা চলছে। সেখানেই এই চুক্তির খসড়া চুড়ান্ত করা হতে পারে। এমন আভাস দিয়েছেন ইসরাইলি এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামাসের কাছে বন্দী ৩৩ জন ইসরাইলি নাগরিকের মুক্তির বিষয়েও সেখানে আলোচনা হবে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়টি ৪২ দিন স্থায়ী হবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দোহায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একজন কূটনীতিবিদ। পাশাপাশি জিম্মি হওয়া কয়েকজনের পরিবারের সদস্যদের আজ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করছে।
সোমবার এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, সম্ভাব্য মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের বেশিরভাগই জীবিত আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। তাদের মরদেহ হামাস ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করবে।
হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণ সীমান্তে হামলা করে। তখন সেখান থেকে ২৫১ ইসরাইলি নাগরিককে জিম্মি করে। এরমধ্যে এখনো ৯৪ জন হামাস ও তাদের মিত্রদের কাছে বন্দী আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৯৪ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে বলে ধারণা করছে ইসরাইলি সরকার। নিহতদের মৃতদেহ হস্তান্তরকে জিম্মি মুক্তির অংশ হিসেবেও আখ্যা দেয়া হতে পারে।
ইসরাইলি ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এসব শর্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত ইসরাইল।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার এক বক্তব্যে এমন আশাবাদ জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে বক্তব্যে তিনি বলেন, চুক্তি চূড়ান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক চাপ অব্যাহত রেখেছে ।
জো বাইডেন তার বক্তব্যে জানান, চুক্তির কাঠামো তারা ঠিক যেভাবে তৈরি করেছেন, তাতে জিম্মিরা মুক্তি পাবে। যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং ইসরাইল নিরাপত্তা পাবে। এতে তারা হামাসের শুরু করা যুদ্ধে ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্ভোগে থাকা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারবেন। তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেও যেনো নরক যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে।
প্রথম চুক্তি বাস্তবায়নের ১৬তম দিবস থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতিতে স্থায়ীভাবে গাজার সংঘাতের অবসান হতে পারে।
সবশেষ প্রস্তাব মতে, ইসরাইলি বাহিনী ফিলাডেলফি করিডর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। মিশর-গাজা সীমান্তের অপ্রশস্ত ভূখণ্ডে চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি সেনারা সেই করিডর ছাড়বেন না।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের সবশেষ যুদ্ধবিরতির আলোচনা এই শর্তের কারণেই ব্যর্থ হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির শুরু থেকেই গাজা থেকে ইসরাইলি সামরিক উপস্থিতি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি ছিল হামাসের। এই শর্ত মেনে নেয়ার আভাস দিয়েছে হামাস।
ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরাইল গাজার ভেতর একটি বাফার জোন তৈরি করবে। ইসরাইল-গাজা সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতেই উদ্যোগটি নেয়া হবে। তবে এই বাফার জোন ঠিক কতটুকু জায়গা জুড়ে করা হবে, তা এখনো জানাননি তিনি। চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম কারণও ছিল এই বিষয়টি।
হামলার আগে বাফার জোনের আকার ছিল ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। পরবরতীতে সেপ্টেম্বরে ইসরাইল বাফার জোন বাড়িয়ে দুই হাজার মিটার করার প্রস্তাব করে। তাতে সম্মতি দেয়নি হামাস।
যুদ্ধবিরতির মধ্যে উত্তর গাজার বাসিন্দারা নিরাপদে তাদের বাসায় ফিরতে পারবেন। তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলেন, যথাযথ 'নিরাপত্তা ব্যবস্থা' মেনেই তাদেরকে ফেরানো হবে।
হামাসের কাছে বন্দী ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কাছে বন্দী ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাবেন। তবে ইসরাইলি হত্যার বিরুদ্ধে অভিযুক্ত যারা, তাদেরকে পশ্চিম তীরে মুক্তি দেয়া হবে না। তাদেরকে গাজা উপত্যকা অথবা আলোচনা সাপেক্ষে দেশের বাইরে মুক্তি দেয়া হবে।
সোমবার এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, রোববার রাতে দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ডেভিড বারনিয়ার আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় তারা আশার আলো দেখছেন।
ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সেটি কত ঘন্টা বা কত দিনের মধ্যে তা বলতে পারেননি তিনি।
তার মতে, চুক্তির শর্তগুলো শীঘ্রই বাস্তবায়নের জন্য ইসরাইল তৈরি। তবে সেটি আরোপ করতে নিরাপত্তা ক্যাবিনেট ও সরকারের পূর্ণাঙ্গ ক্যাবিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।
সৌদি আরবে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে তারা বেশি প্রস্তুত। তবে দোহার মধ্যস্থতাকারীরা দুপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় ১২শরও বেশী ইসরাইলি নাগরিক মারা যায়। আর বন্দী করা হয় আড়াইশ ইসরাইলি নাগরিককে। আর সেদিন থেকেই গাজায় প্রতিশোধমূলক, নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইল। যা এখনও চলছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৬ হাজার ৫শ’৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু।