স্মরণকালের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতা জারি
স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলে গেলো ৯ দিন ধরে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। ৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই দাবানল ইতোমধ্যে প্রাণ কেড়েছে অন্তত ২৫ জনের এবং ধ্বংস করেছে হাজারো বাড়িঘর ও স্থাপনা। পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে ঝোড়ো বাতাস ‘সান্তা অ্যানা’, যা দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় আবহাওয়া দপ্তর সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ জারি করেছে, পাশাপাশি দেখা দিয়েছে 'আগুন টর্নেডো'র বিরল কিন্তু ভয়াবহ আশঙ্কা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে জানিয়েছেন বর্তমানে চরমভাবাপন্ন পরিবেশের কারণে দাবানল নিজস্ব আবহাওয়া তৈরি করে আগুন টর্নেডো ঘটাতে পারে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় গত আট মাস ধরে বৃষ্টিপাতের অভাব, অত্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়া এবং তীব্র বাতাস একত্রে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আগুন টর্নেডো বিরল হলেও ভয়াবহ, যা দাবানলকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
দাবানল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে অভিজাত প্যাসিফিক প্যালিসেডস এবং আলটাডেনা এলাকায়। প্যালিসেডসে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং আলটাডেনায় আরও পাঁচ হাজারের বেশি স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। দাবানলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে গেছে, যা ভৌগোলিকভাবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের আয়তনের আড়াই গুণ।
‘সান্তা অ্যানা’ ঝোড়ো বাতাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ঘণ্টায় ৭২ মাইল গতিতে বইতে থাকা এই বাতাস আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসের গতি আরও বাড়তে পারে, যা নতুন দাবানলের জন্ম দিতে পারে।
দাবানলের কারণে ইতোমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে লক্ষাধিক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিপর্যয়ের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, এখনও বহু মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার এবং জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আরও এক সপ্তাহ ধরে তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনচুরা কাউন্টির কিছু অংশে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
দমকলকর্মীরা দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে শুষ্ক পরিবেশ ও তীব্র বাতাস তাদের কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাবানলের বিপর্যয়ে অন্তত ১২ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং আরও ৫৭ হাজার অবকাঠামো ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
এসি//