আন্তর্জাতিক

৩০ হাজার অভিবাসীর জন্য গুয়ানতানামো বন্দিশালা প্রস্তুতের নির্দেশ ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (২৯ জানুয়ারি) একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। আদেশে কিউবার গুয়ান্তানামো বে নৌ ঘাঁটিতে ৩০ হাজার অভিবাসী ধারণক্ষম একটি নতুন আটককেন্দ্র নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকান জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ সবচেয়ে বিপজ্জনক অবৈধ অভিবাসীদের গুয়ান্তানামোতে রাখা হবে। এটি আমাদের ধারণক্ষমতা তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিগুণ করবে।’

ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসে "লাকেন রাইলি অ্যাক্ট"-এ স্বাক্ষর করার ঠিক আগে, যা তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় আইনগত অর্জন। নতুন এই আইনে নির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগে অভিবাসীদের আটক করার বিধান রয়েছে।

সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান টম হোমান বলেন, প্রশাসন বিদ্যমান অভিবাসী আটককেন্দ্রগুলো সম্প্রসারণ করবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এই নতুন আটককেন্দ্র পরিচালনা করবে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম জানান, গুয়ান্তানামো বেতে সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধীদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত বন্দিশালা তৈরি করা হতে পারে।

গুয়ানতানামো বে কারাগার, যা "গিতমো" নামেও পরিচিত, ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারাগারটি কিউবার গুয়ানতানামো বে এলাকায় অবস্থিত এবং মূলত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ৯/১১ হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আটক ব্যক্তিদের রাখার জন্য তৈরি করা হয়। শুরুতে এখানে প্রায় ৮০০ বন্দিকে আটক রাখা হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম পুরুষ ছিলেন। তাদের অনেককে আল-কায়েদা বা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্রের সন্দেহে আটক করা হয়েছিল।

এই কারাগারে বন্দিদের রাখার আগে অনেককে গোপন বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হতো এবং সেখানে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গুয়ানতানামো বে কারাগারকে আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। 

ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামা ও জো বাইডেন গুয়ান্তানামো কারাগার বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে সফল হননি। ট্রাম্প বরং এটি খোলা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখানে নতুন অভিবাসী আটককেন্দ্র তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-কানেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবৈধভাবে দখলকৃত গুয়ান্তানামো ঘাঁটিতে হাজার হাজার অভিবাসীকে আটক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বর্বরতা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’

একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, গুয়ান্তানামো বে বর্তমানে ৩০ হাজার অভিবাসী ধারণের জন্য প্রস্তুত নয়। অতীতে এই সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে এবং এত বিশাল সংখ্যক বন্দির দেখভাল করতে বেশি সংখ্যক সামরিক কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচকরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির কঠোরতর রূপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এটি দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ।

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন