যাত্রী কল্যাণ সমিতি
অসহায় যাত্রীদের সিএনজি চালকদের হাতে সমর্পণ করলো সরকার
মিটারে না চালানোর একদফা দাবিতে রাজধানীজুড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের তাণ্ডবের মুখে নতি স্বীকার করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। সংস্থাটি মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশনা বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে অসহায় যাত্রীদের নগরজুড়ে তাণ্ডব চালানো সিএনজি চালকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার ৯৯৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার রিপ্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তার পরিবারের আশীর্বাদে বিআরটিএ’র কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি, ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, অটোরিকশা উত্তরা মোটরের কিছু ডিলার মিলে এক ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। তারা সিএনজি অটোরিকশার রিপ্লেসমেন্ট খাত থেকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। এদের একেকজন এখন শতশত কোটি টাকার মালিক। এই কারণে ৩ লাখ টাকার এক একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এখন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। তৎকালীন সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিবার এইখাতে সরাসরি জড়িত থাকায় তৎসময়ে কেউ টু শব্দ করার সাহস পাইনি।
সাবেক সড়কমন্ত্রী আত্মগোপনে চলে গেলেও সিএনজি অটোরিকশা খাতের এই আওয়ামী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিপ্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিআরটিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা গত একদশক ধরে এখনো ঘুরেফিরে ঢাকা-চট্টগ্রামে স্বপদে বহাল রয়েছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে উল্লিখিত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট নানান আন্দোলনে উস্কে দিচ্ছে। তারা একেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো মনে করেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী এই সিন্ডিকেটটি বর্তমান সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা, সরকারের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা কখনো এক যুগ আগে যাচাই-বাছাইতে বাদ পড়া অস্থিত্বহীন মিশুক অটোরিকশা রিপ্লেসমেন্টের প্রক্রিয়া রাতারাতি করে নিতে চায়। আবার কখনো ঢাকা মহানগরীতে ৫০০০ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪০০০ চালকের নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাবি নিয়ে কখনো বিআরটিএ’র সদর কার্যালয় ঘেরাও করে, কখনো সচিবালয়ের সামনে, প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করে।
এই সিন্ডিকেটের নির্দেশে সিএনজি অটোরিকশা খাতকে আলোচনায় রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে বিআরটিএ’কে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে না চালালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার পুরোনো আইনটি আবারো নতুন করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার ব্যবস্থা করে। আইন জারির পর পর কতিপয় সিন্ডিকেটধারী সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা চালকদের উস্কে দিয়ে আজ সকাল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ রেখে নগরজুড়ে তাণ্ডব চালায়। এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিএ এই সিন্ডিকেটের কাছে নতিস্বীকার করে অসহায় যাত্রীদের তাণ্ডব চালানো সিএনজি অটোরিকশার চালকদের হাতে তুলে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সামনে নতি স্বীকার করে নগরজুড়ে তাণ্ডব চালানো চালকদের হাতে অসহায় যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়ায় বিআরটিএ’র মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জনগণের টাকায় পরিচালনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যাত্রী অধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাসের উচ্ছেদ ঠেকাতে গোলাপি রঙের বাস চালুর উদ্যোগ, বাস সংকটের কারণে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আগামী সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এসি//