দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী খেলাপি ঋণ এখন
খেলাপী ঋণ প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী খেলাপী ঋণ প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা।
গেলো বছর ডিসেম্বরের শেষে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। গেলো সেপ্টেম্বরের শেষে এই পরিমান ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে শ্রেণিকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। এই হার ডিসেম্বর শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় গভর্ণর আহসান এইচ মনসুর আশ্বস্ত করেন, খেলাপি ঋণ বাড়লেও আমানতকারীদের টাকা পেতে কোনো সমস্যা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ হয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এই হার ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এ হার ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।
গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা বেড়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক থেকে নানা সুবিধার আড়ালে যে অর্থ তোলা হয়েছিল, তা এখন খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে। সেই অর্থের বড় একটা অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে।
গেলো ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হতে শুরু করে। সাবেক সরকারের সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নেওয়া ঋণ এবং বিভিন্ন সুবিধার বিষয়টি প্রকাশ হচ্ছে। বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই নীতিগুলো পরিবর্তন করেছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়েছে।
এমএ//