পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাক
নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকধারীদের গোলাগুলি চলছে
বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কাছি বোলান জেলায় যাত্রীবাহী একটি ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।
সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকধারীদের ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। অন্যদিকে যাত্রীদের উদ্ধারে যাওয়া ১১ সেনাকে হত্যার পাশাপাশি ট্রেনে থাকা ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করে রেখেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি, এমন খবর দিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। বর্তমানে ট্রেনটি পেহরা কুনরি ও গাদালার এলাকার মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আর রেলওয়ের কন্ট্রোলার মুহাম্মদ কাশিফ জানিয়েছেন, ট্রেনটিতে ৯টি বগি আছে। যেখানে প্রায় ৫০০ যাত্রী অবস্থান করছে। বন্দুকধারীরা ৮ নম্বর টানেলে ট্রেনটিকে আটকে রেখেছে। যাত্রী ও ট্রেনের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কাছি বোলান জেলার পুলিশ কর্মকর্তা রানা মুহাম্মদ দিলওয়ার ডন পত্রিকা বলেছেন, ট্রেনটি পাহাড় ঘেরা একটি টানেলে আটকা পড়ে আছে। এন-৬৫ হাইওয়েতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার হামলার দায় স্বীকার করে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি জানায়, কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডিগামী দ্য জাফর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে তারা হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি ট্রেনটি জিম্মি করার আগে সিবি জেলায় থাকা রেললাইন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে ট্রেনটি বেলুচ আর্মিদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
পাকিস্তানের পুলিশ বলছে, হামলায় ট্রেন চালকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। ট্রেনটি উদ্ধারে ঘটনাস্থলে নিরাপত্তাবাহিনী পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে বেলুচিস্তান সরকারের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম ডনকে জানায়, ট্রেনের ভিতরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে।
বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি দাবি করেছে, নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যসহ অনেক যাত্রীকে জিম্মি করা হয়েছে। এসব জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। তবে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কোন কর্মকর্তা জিম্মির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
এদিকে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নওয়াজ।
বেলুচিস্তান আর্মির ক্রমাগত হামলার কারণে দুই মাস বন্ধ থাকার পর গেলো অক্টোবরে সেখানে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে কয়েক যুগ ধরে নিরাপত্তাবাহীনির সঙ্গে বেলুচ বিচ্ছিন্নতবাদীদের সংঘাত চলছে। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গড়তে চায় এসব বিচ্ছিন্নতবাদী।
প্রদেশটিতে বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের ৬২০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আছে। নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতই সত্ত্বেও চীনা এসব প্রকল্পে হামলার ঘটনা ঘটছে।
জানুয়ারিতে ইসলামাবাদভিত্তিক চিন্তন সংস্থা ইন্সটিটিউট অফ পিচ স্টাডিজ সতর্ক করে বলে, বেলুচিস্তানের পরিস্থতি খুবই ভয়াবহ। সংস্থাটির এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালে প্রদেশটিতে ১৫০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১১৯ শতাংশ বেশি।
গেলো মাসে বেলুচিস্তানের কালাত শহরে বেলুচ আর্মিদের হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৮ সদস্য নিহত হন।
এনএস/