জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
চার দিনের সফরে বাংলাদেশে রয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সফরের তৃতীয় দিনে তিনি নানা কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুর ১টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই বৈঠক শুরু হয়ে চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করা উচিত। তিনি আরও বলেন, সংস্কারের বাকি বিষয়গুলো সংসদেই সমাধান করা যেতে পারে, কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন কীভাবে হবে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে জাতিসংঘ। এ দেশের জনগণই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে সংস্কার বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। জনগণের কাছে আমরা সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না। পাশাপাশি সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও উপস্থাপন করেছি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য গঠনে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাটির সহায়তা প্রয়োজন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এখনও জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কর্মরত রয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।
এর আগে, গেলো বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৫টায় চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পরে শুক্রবার (১৪ মার্চ) তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতার করেন।
এসি//