আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ, মস্কোর শর্ত কী মেনে নেবে কিয়েভ?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিম ইউরোপের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে মরিয়া ইউক্রেন। আর এটাই হলো মস্কোর সঙ্গে কিয়েভের যুদ্ধ শুরুর অন্যতম প্রধান কারণ। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেই তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রচেষ্টায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সংঘাত থামাতে রাজি হলেও একের পর এক শর্ত দিয়ে যাচ্ছেন।

তারপরও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে সম্মত করাতে আশা ছাড়ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার(১৮ মার্চ) প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলবো। আমরা দেখতে চাই, এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হয় কিনা। হয়তো পারবো, হয়তো পারবো না, কিন্তু আমি মনে করি আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে।’

প্রেসডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা রাশিয়া থেকে বেশ ভালো খবর পাচ্ছি। আমরা ভালো কিছু শুনতে পাচ্ছি। আমার মনে হয় রাশিয়া আমাদের সাথে একটি চুক্তি করতে চলেছে এবং আমি আশা করি এটি হবে। আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে কথা বলেছি। আমরা অনেক মানুষের সাথে কথা বলেছি এবং ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির জন্য অপেক্ষা করছে। তবে যুদ্ধবিরতি এবং শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তির ব্যাপারে আমি ভালো বার্তা পাচ্ছি।  আর এ ব্যাপারে রাশিয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু ভালো লক্ষণ দেখছি।’

গেলো সপ্তাহে ইউক্রেনের গ্রহণ করা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জন্য পুতিনের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে উভয় পক্ষই সপ্তাহ শেষে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে গেছে এবং রাশিয়া পশ্চিম রুশ অঞ্চল কুরস্ক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বিতাড়িত করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

যুদ্ধবন্ধে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যার মধ্যে তাঁর অন্যতম শর্ত, ইউক্রেন কোনওদিন ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। তবে  পুতিনের এই দাবি ইউক্রেন আদৌ মানবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ইউক্রেনিয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সাফ বলে দিয়েছেন, তাঁর সব কথা শুনতে হবে। রাশিয়ার হাতে  ইউক্রেনের জমি তুলে দিয়ে তিনি মাথানত করবেন না।

যুদ্ধ বন্ধে সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদে ইউক্রেন ও আমেরিকার  প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। সেখানেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানান তিনি। রাজি হয়েছেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতেও। জেলেনস্কির থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তড়িঘড়ি মস্কোয় মার্কিন কর্মকর্তাদের পাঠান ডোনাল্ড ট্রাম্প। গেলো বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কথা বলেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে। ওই আলোচনায় চারটি শর্ত রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

এবিষয়ে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো জানিয়েছেন, পুতিনের চারটি শর্ত হলো- ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া যাবে না। যেকোনও শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হবে। ইউক্রেনের যে জমি রাশিয়ার দখল রয়েছে, সেগুলোর উপর রাশিয়ার অধিকারই কায়েম থাকবে। ইউক্রেনে অন্য দেশের সেনা প্রবেশ করবে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এই চারটি বিষয়ে গ্যারান্টি চান প্রেসিডেন্ট পুতিন। ট্রাম্প যদি এই শর্ত মেনে নেন তাহলেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাবেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার আগে নয়। তবে ইউক্রেন এই শর্তগুলো মানবে মানবে কিনা তাই- এখন দেখার বিষয়।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন