আইন-বিচার

তদন্ত কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তের অপচেষ্টা হচ্ছে : চিফ প্রসিকিউটর

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। জানালেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

গেলো বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে  । 

চিফ প্রসিকিউটর বলেন , জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-এ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় কিছু চক্র তদন্তে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে , যাতে তদন্তের স্বচ্ছতা এবং বিচার প্রক্রিয়া নষ্ট হয়।

তিনি আরো জানান , ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ খরচ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।  এসব অপপ্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর অভিযোগের ভিত্তিতে ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্স নামক ব্রিটেনের বিখ্যাত আইনজীবী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম স্পষ্টভাবে জানান , "আমাদের কাছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজার শহীদের প্রমাণ এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত ছাত্র-জনতার তথ্য রয়েছে।  এসব প্রমাণ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হবে।"

বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।  এর মধ্যে ৩৯টি তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ২২টি মিস কেইস রয়েছে যেখানে ১৪১ জন অভিযুক্ত।  এদের মধ্যে ৫৪ জন গ্রেফতার হলেও, ৮৭ জন এখনও পলাতক।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।  এর ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।  ছাত্রদের উপর দমন-পীড়ন চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করা হয়।  এখন সেই অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চলছে।

প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন , এই বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে এবং সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।  ট্রাইব্যুনাল প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।  হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে ছাত্র সমাজের মধ্যে উত্তেজনা ও প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।  শীঘ্রই সরকারের দমনপীড়ন এবং নিপীড়নের কারণে ছাত্ররা একা পড়ে যায়নি ,জনতাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। শুরু হয় এক তুমুল আন্দোলন, যা পুরো দেশের রাজনীতি ও সমাজকে চমকে দেয়।

এই আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বাহিনী , আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করে।  ছাত্রদের উপর অমানবিক অত্যাচারের মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।  দীর্ঘ ৩৬ দিনের ঐ আন্দোলন ছিল এক অনন্য সংগ্রাম।  যেখানে ছাত্র-জনতার একাত্মতা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।  তারা নির্দয়ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল।  অন্যদিকে সরকার তাদের দমন করতে নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছিল।  অবশেষে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ফলে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটে।  এ আন্দোলনের পেছনে ঘটে যাওয়া অভিযুক্তদের বিচার করার জন্য কাজ করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। 

বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৭ জন প্রসিকিউটর এবং ২৪ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা মিলে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।  সকল বাধা সত্ত্বেও তারা নিশ্চিত যে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার একদিন নিশ্চিত হবে।

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন