বিনোদন

বন্ধ ফ্ল্যাট, নিঃসঙ্গ মৃত্যু—আসল সত্য মিলল ৬ মাস পর!

অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর

করাচির ডিফেন্স এলাকায় একটি ফ্ল্যাট। সাত বছর ধরে সেখানে একাই বসবাস করতেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর। বাইরে থেকে দেখে হয়তো কেউ আঁচও করতে পারেনি, যে এই নীরব দেয়ালের ভেতর ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন একজন মানুষ। আর সেই নিঃশেষ হওয়ার খবর মিলল ছয় মাস পর—যখন উদ্ধার করা হলো তাঁর পচাগলা মরদেহ।

৩২ বছর বয়সী অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে করাচির ডিফেন্স ফেজ-৬ এর ইত্তেহাদ কমার্শিয়াল এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে। ৮ জুলাই (২০২৪) পুলিশ ফ্ল্যাটটির দরজা ভেঙে ঢুকে যখন মরদেহ খুঁজে পায়, তখন তা পচে অর্ধগলিত অবস্থায় ছিল। শরীরের মাংস থেকে গন্ধে বাসা বেঁধেছিল পোকা।

শুরুতে পুলিশ ধারণা করেছিল, তার মৃত্যু হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। তবে তদন্তে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়, হুমাইরার মৃত্যু আসলে হয়েছিল প্রায় ছয় মাস আগেই। এত দীর্ঘ সময়েও কেন কেউ খোঁজ নেয়নি—সেই প্রশ্ন এখন ঘুরছে পুরো পাকিস্তানের শোবিজ অঙ্গনে।

পুলিশ জানায়, হুমাইরার অ্যাপার্টমেন্টের পাশের ফ্ল্যাটটি দীর্ঘদিন খালি ছিল। তাই তার চলাফেরা বা উপস্থিতি নিয়ে কেউ সন্দেহ করেনি। এ ছাড়া ফ্ল্যাটের বাথরুমের জানালা খোলা থাকায় দুর্গন্ধ বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল, বিল্ডিংয়ের ভেতরে ছড়ায়নি।

স্থানীয়রা জানান, হুমাইরা মাঝে মাঝেই করাচি ও লাহোর যাতায়াত করতেন। ফলে অনুপস্থিত থাকাটা ছিল 'স্বাভাবিক'। অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি লাহোরে গেছেন। তবে মৃত্যুর কয়েক দিন পর, একজন পুরোনো বন্ধু অক্টোবর ৭-এর পরে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এছাড়া নিরাপত্তারক্ষীও ফোন করেছিলেন—কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।

পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সৈয়দ জানান, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু, দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। মৃতদেহের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে প্রাথমিক ময়নাতদন্তেই অনেক জটিলতা তৈরি হয়।

তদন্তের স্বার্থে সিন্ধু পুলিশ একটি ৬ সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন এসপি ক্লিফটন ইমরান জাগিরানি। প্রতিদিন এই তদন্ত দলের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে এসএসপি সাউথকে।

এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে হুমাইরার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুর-এ-শেহওয়া। তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন হুমাইরার একটি শেষ ভয়েস নোট।

সেখানে হুমাইরাকে বলতে শোনা যায়—

“আমি দুঃখিত, আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম, এখানে ওখানে ঘুরছিলাম। খুব খুশি হয়েছি শুনে যে তুমি মক্কায় আছো। আমার জন্য অনেক দোয়া করো প্লিজ। তোমার এই কিউটি বন্ধু কিংবা বোনের জন্য মন থেকে অনেক দোয়া করবে। আমার ক্যারিয়ারের জন্যও দোয়া করবে।”

তদন্তকারীরা জানান, হুমাইরার সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগও ছিল খুব সীমিত। কী কারণে এমন দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সে প্রশ্ন এখনও অস্পষ্ট। তার পরিবার বা আত্মীয়দের পক্ষ থেকেও এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে পাকিস্তানের অভিনয় জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে প্রশ্ন তুলছেন—একজন শিল্পী, একজন মানুষ কীভাবে ছয় মাস ধরে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারেন কারো চোখে না পড়েই? 

 

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন