জাপানে কর্মী সংকট, বাংলাদেশের জন্য খুলছে নতুন দুয়ার
জাপানে নানা খাতে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার আগ্রহ আগের তুলনায় কমছে। ফলে জাপান এখন বাংলাদেশ, উজবেকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে শ্রমিক সংকট মোকাবেলায়।
জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ চারটি দেশের বিভিন্ন কর্মসংস্থান সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে যাচ্ছে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ হবে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে প্রচলিত কাঠামো ও চাহিদার বিশ্লেষণ এবং বাধাগুলো চিহ্নিত করা।
বিশেষ করে নার্সিং, খাদ্যসেবা ও নির্মাণ খাতেই সবচেয়ে বেশি কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। এই চাহিদা পূরণে ওনোদেরা গ্রুপের একটি জনপ্রিয় সুশি রেস্তোরাঁ সম্প্রতি উজবেকিস্তানের একটি অভিবাসন সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা করেছে।
এতে জাপানে আগ্রহী তরুণদের জন্য ছয় মাসের জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণসহ একটি প্রস্তুতি কার্যক্রম চালু হবে। এরপর যোগ্যরা চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জাপানে কাজের সুযোগ পাবেন। বছরে প্রায় ২০০ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
একই পথে হাঁটছে আরও কিছু সংস্থা। ‘জাপান-চীন-এশিয়া এডুকেশনাল মেডিকেল কালচারাল এক্সচেঞ্জ’ নামের একটি সংস্থা এপ্রিলে উজবেকিস্তানে তিনটি জাপানি ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছে।
এদিকে ওয়াতামি নামের একটি রেস্তোরাঁ চেইন বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করছে, যেখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার দক্ষ কর্মী পাঠানো হবে জাপানে।
তবে জাপান সরকার আশা করছে, এই দেশগুলো থেকে আগত শ্রমিকের সংখ্যা ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের কর্মীর সংখ্যা ছিল ৪৯২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন এবং প্রতি বছর সেখানে প্রায় ১ কোটি নতুন কর্মী যুক্ত হচ্ছে। একই বছরে ভারতের ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। একই সময়ের মধ্যে জাপানে বাংলাদেশের নিবন্ধিত কর্মীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,১৭৭ জনে।
বর্তমানে জাপানে ‘টেকনিক্যাল ইন্টার্ন’ ও ‘নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক’ প্রোগ্রামের আওতায় ৭ লাখ ৪০ হাজার বিদেশি কর্মী কাজ করছেন, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ভিয়েতনাম থেকে আসা।
জাপানে চীনা কর্মীর সংখ্যা এখন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের তরুণরা বিদেশে কাজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। ২০১৩ সালে চীনের মাথাপিছু জিডিপি ৭ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই এই প্রবণতা দেখা যায়। ২০২৪ সালের শেষে চীনা কর্মীর সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২৫,৯৬০ জনে।
এমএ//