আন্তর্জাতিক

‘গাজা সম্পূর্ণ দখলের’ পরিকল্পনায় ইসরাইলি সেনাপ্রধানের আপত্তি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তবে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামির। বুধবার (০৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে, গাজার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান নেতানিয়াহু। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘পুরো গাজা আমাদের দখলে আনতেই হবে। হামাস জিম্মিদের যেখানে আটকে রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেসব এলাকাও বাদ যাবে না।’

সেনাপ্রধানকে তিনি কঠিন ভাষায় বলেন, যদি এই লক্ষ্য নিয়ে সেনাবাহিনীর আপত্তি থাকে, তাহলে পদত্যাগের পথ খোলা।

তবে সেনাপ্রধান জামির মনে করেন, এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবে একটি মারাত্মক ভুল হতে পারে। তিনি সতর্ক করেন বলেন, গাজা পুরোপুরি দখলে নিতে গেলে সেনাবাহিনীকে দীর্ঘমেয়াদে সেখানে অবস্থান করতে হবে, যা এক ধরনের ‘ফাঁদে পা দেওয়ার মতো।

তার মতে, হামাস এখনো পুরোপুরি নিঃশেষ হয়নি। এমন হামলা জিম্মিদের জীবনকে আরও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বর্তমানে গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা ইসরাইলি বাহিনীর দখলে রয়েছে। তবে প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘর্ষ সেনা সদস্যদের উপর বিরাট মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানান ইসরাইলি সেনাপ্রধান। 

জামির বলেন, ‘বহু সেনা সদস্য ক্লান্ত, হতাশ এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অনেকে এখন রিজার্ভ ফোর্সের উপর নির্ভর করেই কাজ চালাচ্ছেন।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরাইল। হামলায় ইসরাইলে অন্তত ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই গাজায় সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরাইল। হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ।

দীর্ঘ ২২ মাসের দখলদার ইসরাইলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ১৫৮ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪২ জন। এদের বড় একটি অংশ নারী ও শিশু।

এর মধ্যে মানসিক অবসাদ ও হতাশায় ভুগছেন অনেক ইসরাইলি সেনাও। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। ইসরাইলি পত্রিকা ‘হারেৎজ’-এর দাবি, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৫৮ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে আইডিএফের বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাইছেন যে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এই সংকটের সমাধান হোক। প্রায় ২০০ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি লিখে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন, যেন গাজায় অভিযান বন্ধ করা হয়।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কোনো ধরনের টানাপোড়ন থাকার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। 

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘সেনাপ্রধানের কাজ হলো মতামত দেওয়া। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি কোনো লক্ষ্য ঠিক করে, তা বাস্তবায়ন করাই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’

 

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন