কলকাতায় চালু হয়েছে আ.লীগের ‘পার্টি অফিস’
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ করেন। এরপর থেকেই অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তারা নিরাপদে অবস্থানের পাশাপাশি 'দলীয় কার্যালয়' খুলে রাজনৈতিক কার্যক্রমও চালাচ্ছে।
শুক্রবার (০৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার কাছের এক শহরে গোপনে চালু হয়েছে আওয়ামী লীগের একটি অঘোষিত রাজনৈতিক কার্যালয়। সেখানে নিয়মিত মিলিত হচ্ছেন পলাতক নেতারা।
প্রথমদিকে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ছোট পরিসরে বৈঠক চালানো হলেও, এখন এই নতুন গোপন অফিসে কার্যক্রম চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারা।
অফিসটি গড়ে তোলা হয়েছে এক বাণিজ্যিক ভবনের আটতলায়। বাইরের কেউ বুঝতেই পারবে না এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাইরে নেই কোনো সাইনবোর্ড, শেখ হাসিনা কিংবা বঙ্গবন্ধুর ছবি—সবকিছুই গোপন রাখতে নেওয়া হয়েছে কড়া সতর্কতা। এমনকি অফিসের ভেতরেও নেই দলের কোনো ফাইল বা দলীয় চিহ্ন। পুরোনো ফার্নিচারেই চলছে কার্যক্রম।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা বিবিসি বাংলাকে জানান, ‘কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতন ভাবে। আমরা চাইনি এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় কার্যালয়ে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি।
তিনি আরো জানান। ‘এই ঘরটিতে একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন বসতে পারেন, যদিও জায়গা কিছুটা ছোট। ছোট বৈঠক এখনো নেতাদের বাসায় হয়। বড় মিটিংয়ের জন্য ভাড়া করা হয় রেস্টুরেন্ট বা হলরুম।’
আওয়ামী লীগের সূত্র অনুযায়ী, অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র সহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় ২০০ জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন।
এই নেতাদের অনেকেই সময়-সুযোগমতো ওই কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠকে অংশ নেন। তবে অফিসের কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। প্রয়োজন হলেই শুধু ব্যবহার হয় অফিসটি।
বিবিসি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি অফিসের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ কিছুই জানেন না। দলেরও কোন স্তরের নেতা-কর্মীরা এই অফিসেরে ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি।
তবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর এড়িয়ে এমন কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। অনুমান করা হচ্ছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া সেখানে এমন রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো সম্ভব হতো না।
এমএ//