আজ সালমান শাহর প্রয়াণ দিবস
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিছু তারকা শুধু সিনেমার চরিত্রে নয় তারা বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে, সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে। ঠিক তেমনই এক নাম সালমান শাহ।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনটি বাংলা চলচ্চিত্রের ভক্তদের জন্য হয়ে আছে চিরকালীন বেদনার দিন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে সালমান শাহর আকস্মিক মৃত্যু যেন কোটি হৃদয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল এক মুহূর্তে। সময় কেটে গেছে ২৯ বছর। তবুও এই দিন এলে ভক্তরা আবারও ফিরে যান শোক, বিস্ময় আর ভালোবাসার আবেগে।
শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামের এক কিশোরের অভিনয় যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘পাথর সময়’-এ শিশুশিল্পী হিসেবে তার প্রথম উপস্থিতি। পরে নাটক ও বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করলেও, ভাগ্যের আসল দুয়ার খুলে যায় ১৯৯৩ সালে।
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। নায়িকা ছিলেন মৌসুমি। প্রথম সিনেমাতেই ঝড় তুলেছিলেন সালমান শাহ। তার চেহারা, অভিনয়শৈলী, রোমান্টিক অভিব্যক্তি সবকিছু মিলে দর্শকরা যেন নতুন প্রজন্মের নায়ককে খুঁজে পান তার ভেতরে।
মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ার। অথচ ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে অভিনয় করেছেন ২৭টি সিনেমায়। এবং আশ্চর্য হলেও সত্য, এর বেশিরভাগই ছিল ব্লকবাস্টার।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘সুজন সখী’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘বুকের ভেতর আগুন’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘তোমাকে চাই’ প্রতিটি ছবিই বক্স অফিস মাতিয়েছে।
সালমান শাহর নাম তখন তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন ও স্টাইলের প্রতীক। তার পোশাক, চুলের কাট, সানগ্লাস, হেঁটে যাওয়ার ভঙ্গি সবই মুহূর্তে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেন তিনি শুধু সিনেমায় নন, বাস্তব জীবনেও হয়ে উঠেছিলেন আইকন।
খ্যাতির তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সালমান শাহকে বলিউড থেকেও অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ ফিরিয়ে দিয়ে বাংলার চলচ্চিত্রকেই বেছে নেন। ভক্তদের ভালোবাসাই ছিল তার কাছে সবকিছু। এই সিদ্ধান্তই তাকে চিরকালীন ‘বাংলার স্বপ্নের নায়ক’ বানিয়ে দেয়।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের নিজ বাসায় হঠাৎ করেই থেমে যায় এই তারকার জীবনযাত্রা। পুলিশি তদন্তে বলা হয়, এটি আত্মহত্যা। কিন্তু পরিবার ও ভক্তরা শুরু থেকেই এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। একাধিক তদন্ত হলেও ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে, তার মৃত্যুর রহস্য আজও অধরা। ফলে রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বেদনা আরও গভীর হয়।
সময় চলে যায়, প্রজন্ম বদলায়। কিন্তু সালমান শাহ থেকে যান ভক্তদের হৃদয়ে। তার স্টাইল এখনো অনুকরণ করা হয়, তার ছবি এখনো দর্শকদের আবেগে ভাসায়।
এসকে//