১৩ দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ দুই বোনের, প্রমাণ মিলেছে ধর্মান্তরিত হওয়ার
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বী আপন দুই বোন ১৩ দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নিখোঁজ দুই বোন ধর্মান্তরিত হয়েছে জানিয়েছে এক আইনজীবী।নিখোঁজ দুই বোনের নাম স্নিগ্ধা রানী (২৪) ও পূর্ণীমা রানী (১৮)। তারা রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ বর্মনের মেয়ে।
নিখোঁজ দুই মেয়ের সন্ধান চেয়ে রাজারহাট থানায় সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেছেন তাদের বাবা।গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওই দুই বোন নিখোঁজ হন বলে জিডি সূত্রে জানা গেছে।
স্নিগ্ধা রানী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর পূর্ণীমা একই কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারা দুই বোন একসাথে কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন থেকে ওই দুই তরুণী নিখোঁজ রয়েছেন। দীর্ঘ ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তাদের খোঁজ পায়নি পুলিশ ও তার পরিবার।
নিখোঁজ দুই তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ফোন নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দুই মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের বাবা-মা উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়েপড়েছেন।
ওই দুই মেয়ের বাবা শৈলেন্দ্র নাথ বর্মন জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর দুই মেয়ে একসাথে কলেজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। আমি কিছু দূর তাদের এগিয়ে দিয়ে এসেছি। সারাদিন বাড়ি ফেরেনি। এরপর সন্ধ্যায় হঠাৎ ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি তারা ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদেরকে ফোন দিলে নাম্বার বন্ধ পাই। পরে রাতেই থানায় জিডি করি।
কোনও বাবা-মায়ের একসাথে দুই মেয়ে নিখোঁজ হলে তাদের মনের অবস্থা কেমন হতে পারে একবার ভেবে দেখুন। তারা যে ধর্মান্তরিত হয়েছে সেটাও তো নিশ্চিত নই। তারা তো নিজে থেকে আমাদের কিছু জানাই নাই। ফেসবুকে যা ছড়িয়েছে তা যে সঠিক সেটাও নিশ্চিত হই কীভাবে ! কেউ তাদের আটকে রেখেছে কি না, তাদেরকে গুম করে রাখা হয়েছে কি না তাও তো নিশ্চিত নই। আমার মেয়েরা জীবিত আছে কিনা, থাকলে কোথায়, কীভাবে আছে সেটাও জানতে পারছি না। এগুলো জানার অধিকার তো আমার আছে ! ধর্ম বদলালেও বাবা-মা তো বদলানো যায় না। যে ধর্মেই যাক, ওরা বাড়ি ফিরে আসুক। দূর্গা পূজা চলছে মেয়ে নিখোঁজের শোকে সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। মেয়ের শোকে তাদের মায়ের কান্না যেন থামছেই না। একেকটা দিন কিভাবে যে পাড় হচ্ছে সৃষ্টিকর্তায় জানেন, বলেন স্কুল শিক্ষক বাবা।
এফিডেভিটকারী ও লালমনিরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রনি দুই বোনের ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর একজন হুজুর ও কয়েকজন বোরখাপড়া নারীসহ ওই দুই তরুণী আমার কাছে এফিডেভিট করেছেন। তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে। এমনকি তারা সূরা ফাতেহা ও সূরা ইখলাস মুখস্থ বলেছে। তার মানে তারা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। পরে নাম পরিবর্তনের জন্য আইনি কাগজপত্র প্রস্তুত করে তারা চলে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘ সাথে আসা হুজুর ও অন্য নারীদের আমি চিনি না। আমার সন্দেহ, সাথে আসা হুজুর ও নারীরা ওই দুই বোনের খোঁজ জানেন। তাদের খুঁজে পেলে দুই বোনকেও পাওয়া যাবে।
দুই বোনের খোঁজে মাঠে পুলিশ:
নিখোঁজ দুই বোনের সন্ধানে মাঠে কাজ করছে পুলিশের একাধিক দল। ইতোমধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে দুই বোনকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ বলছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজারহাট ও নাগেশ্বরী থানা পুলিশ নাগেশ্বরী উপজেলা শহরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে হাসান ফেরদৌস নামে মৌলভী ধরণের এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। বাড়িতে বোরখা পড়া বেশ কয়েকজন নারীর উপস্থিতির প্রমাণ পায় পুলিশ। নারী পুলিশের সহায়তায় তল্লাশির চেষ্টা করা হলেও হাসান ফেরদৌস ও তার লোকজন পুলিশকে সহায়তা করেননি। ফলে পুলিশ ফিরে আসে।
অভিযানকালীন (বর্তমানে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত) রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল আলম বলেন, নিখোঁজ দুই বোনের সর্বশেষ লোকেশন নিশ্চিত হয়ে মহিলা পুলিশসহ আমরা নাগেশ্বরীতে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে হাসান ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। লালমনিরহাটে এফিডেভিট করার সময় এই হাসান ফেরদৌস সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বাড়ি তল্লাশিতে সহায়তা না করায় পুলিশ ফিরে আসে। অভিযানকে বিতর্কিত করতে পরের দিন হাসান ফেরদৌস ও তাদের অনুসারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। তবে পুলিশ নিখোঁজ দুই বোনের খোঁজে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, নিখোঁজ দুই বোনের সন্ধানে প্রযুক্তিসহ সব ধরণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি খুব শিগগির তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।