আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত বেড়ে ১০৪

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলের বর্বর হামলায় গেল ১২ ঘণ্টায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ জন শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ২৫৩ জন।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বিমানবাহিনী। গাজা সিটি, বেইত লাহিয়া, বুরেইজ, নুসেইরাত ও খান ইউনিসে ঘরবাড়ি, স্কুল এবং আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একাধিক স্থানে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর আগুন ও ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ আকাশে উঠতে দেখা গেছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, নিহতদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে হাসপাতালগুলো আহতদের চাপে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

সাবরা এলাকায় একটি পরিবারের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। খান ইউনিসের কাছাকাছি এক সড়কে গাড়িতে হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তাদের হামলায় অন্তত ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তারা জানিয়েছে, “দশকের পর দশক ধরে সক্রিয় সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।” তবে গাজায় হামাসের তরফে এসব দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।

হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে এবং সাম্প্রতিক কোনো হামলার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। সংগঠনটি ইসরাইলি বিমান হামলাকে “চুক্তি ভঙ্গ ও যুদ্ধাপরাধ” বলে মন্তব্য করেছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার রাতে বলেন, হামাস “চুক্তি লঙ্ঘন করেছে” এবং এর “গুরুতর মূল্য দিতে হবে।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও সতর্ক করে বলেছেন, হামাস ইসরাইলি সৈন্যদের ওপর হামলা চালিয়ে “লাল রেখা অতিক্রম করেছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় “ইসরায়েল যা করেছে, তা আত্মরক্ষার্থে করছে। তারা হামাসের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা একদম সঠিক কাজ করেছে।

এসময়, ভেনেজুয়েলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ওই অঞ্চলে মাদক পাচারের জাহাজগুলো মানবতার জন্যও হুমকি। তাদের থামাতেই হবে।'

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এসব মন্তব্য মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং লাতিন আমেরিকার নীতি বিষয়ে বেশী বিতর্ক হবে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস জানিয়েছে, গাজায় মৃত বন্দিদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার চুক্তি ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে তারা কেবল পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিল—এবং আগে থেকে কিছু জানত না।

যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার অংশ। তবে সাম্প্রতিক হামলায় চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

 

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন