ফুটবলের জাদুকর ম্যারাডোনার জন্মদিন আজ
বিশ্ব ফুটবলের ‘ঈশ্বর’ খ্যাত ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার ৬৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৬০ সালে ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ভক্তদের কাছে 'এল পিবে দে অরো' (সোনালী বালক) ডাকনামে পরিচিত ছিলেন ম্যারাডোনা। তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স এবং নাপোলির মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে কেটেছে। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ৬০ বছর বয়সে প্রয়াণ ঘটে এই ফুটবল জাদুকরের।
ম্যারাডোনার মহাকাব্যিক ইতিহাস রচনার শুরুটা হয়েছিল ১৬ বছর বয়স থেকে। অল্প বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান নিজের মেধা ও ফুটবল দক্ষতায়। ১৯৭৯ সালে জাপানে নিজ দেশের হয়ে অনন্য এক অর্জন বয়ে আনেন । মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আর্জেন্টিনার হয়ে যুব বিশ্বকাপ জিতেন তিনি। সেখানে গোল্ডেন বলের খেতাবও উঠেছিল ম্যারাডোনার হাতে । সেবারই তার দেশ বুঝে গিয়েছিল ফুটবলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে আসছেন নয়া এক তারকা।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার ম্যারাডোনা মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে দ্বিতীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। ম্যারাডোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং গণমাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ফুটবলারের অধিনায়কত্বে আর্জেন্টিনা ১৯৮৬'র ফুটবল বিশ্বকাপ জেতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি তার বিখ্যাত ‘হাত দিয়ে গোল’টি করেন, যেটি ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ম্যারাডোনাকে গত ৫০ বছরে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন বলে গণ্য করা হয়। তিনি বার্সেলোনা এবং নাপোলির মতো ক্লাবেও খেলেছেন। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্যারিয়ারে সর্বমোট ৩৪৬টি গোল করেছেন আর্জেন্টাইন এ মহাতারকা। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে মোট চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন।
১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা যখন বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে তখন দলকে নেতৃত্ব দেন ম্যারাডোনা। ইতালিতে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে। এরপর ১৯৯৪ সালে তিনি আবার আমেরিকায় আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কত্ব করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ মাদক পরীক্ষায় ফেল করার কারণে তাকে আর্জেন্টিনা ফিরে যেতে হয়।
তার জীবনের শেষ পর্যায়ে ম্যারাডোনা মাদক আসক্তির সমস্যায় ভুগছিলেন এবং ১৯৯১ সালে তার শরীরের মাদকের উপস্থিতি ধরা পড়লে তাকে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। তার ৩৭তম জন্মদিনে ১৯৯৭ সালে তিনি পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন। পরে তিনি আর্জেন্টিনার ঘরোয়া দল বোকা জুনিয়ার্সে যোগ দিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে ম্যারাডোনা জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে দাইয়িত্ব নেন। তবে ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হেরে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয়। ব্যর্থ বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার কোচের পদ থেকে অবসর নেন ম্যারাডোনা।
ম্যারাডোনা হয়তো এখন জীবিত নেই। তবে উপর থেকে নাপোলির লিগ শিরোপা এবং আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় দেখে তিনি খুশিই হচ্ছেন বটে।
এসএইচ//