জানাজায় আক্ষেপ প্রকাশ করে যা বললেন হাদির ভাই
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে গভীর আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তাঁর বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজার আগে দেয়া আবেগঘন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ওসমান হাদির সন্তানের বয়স এখন ৮ মাস। সন্তান হওয়ার পর সে আমাকে বলে, ভাই আমার সন্তানের জন্য একটা নাম নির্বাচন করেন, যেই নামের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা থাকবে। যে নাম সাহসিকতার পরিচয় বহন করবে। ওর সন্তানের নাম দিয়েছেলাম ফিরনাস অর্থাৎ বিপ্লবী এবং সাহসী। আজ ওর সন্তানের দিকে তাকানো যায় না। আমার মা প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।
তিনি বলেন, আমাদের ছয় ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল শরিফ ওসমান হাদি। আজকে তার লাশ আমার কাঁধে বহন করতে হচ্ছে। আজ আপনাদের কাছে আমার কোনো দাবি নেই, শুধু একটিই দাবি ৭ থেকে ৮ দিন হয়ে গেলো, প্রকাশ্যদিবালোকে রাজধানী ঢাকায় খুনি প্রকাশ্যে গুলি করে যদি পার পেয়ে যায় এর থেকে লজ্জার আমাদের কাছে আর কিছুই নেই। যদি বর্ডার ক্রস হয়ে যায়, ৫-৭ ঘণ্টা সময় তারা কেমন করে গেলো এই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম।’
তিনি আরও বলেন, আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নাই। আমার ভাই ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। আপনারা ওসমান হাদির কথা শুনেছেন। ও সবসময় শহীদি মৃত্যু কামনা করতো। হয়তোবা আল্লাহ তার সেই শহীদি কামনা পূরণ করেছেন। কিন্তু আপনাদের কাছে এই ঋণ কোনোদিন ছাড়বো না, আমার ভাই ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে আমরা দেখতে পারি।
হাদির বড় ভাই আরও বলেন, ভাইয়েরা আমার, ৭-৮ দিন পূর্ণ হলো, এখনো পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারলাম না। এই দুঃখে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। আমরা ওসমান হাদির জন্য দোয়া করি, আমরা ওর সন্তান ওর স্ত্রীর জন্য দোয়া করি। ওর সন্তান মাত্র আট মাস বয়স। গতকাল যখন ওর কাছে নিয়ে আসছে। সবাই বাবাকে দেখাচ্ছিল । আমি বললাম, কী লাভ হবে। ও তো কোনোদিন ওর বাবার চেহারার কথা বলতে পারবে না। ওর ছেলে আর কোনোদিন জানবে না যে আমার বাবা কেমন ছিল।
তিনি বলেন, আমার ওসমান হাদি আর ফিরে আসবে না। ওসমান তুমি দেখে যাও লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতা তোমার জন্য পাগল। ওসমান তুমি মরো নাই, তুমি আমাদেরকে পাগল বানিয়ে দিয়ে গেছ। সবার কাছে আমি দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার ভাই শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আল্লাহর কাছে কামনা করছি, আমরা যারা বেঁচে আছি, আমরা যেন আমাদের সার্বভৌম্য বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারি। আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন সবাই।
এদিকে শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
শরিফ ওসমান হাদি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গেল ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে রিকশায় থাকা অবস্থায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। শুক্রবার তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে তাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হবে।
এমএ//