আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে বাড়ির কাজ না করার অপরাধে শিশু শিক্ষার্থীকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল

নির্ধারিত বাড়ির কাজ না লিখে অন্য লেকা জমা দেয়ার অপরাধে সাত বছরের লাম মিয়া ওরফে লাল মিয়া (৭) নামে কওমি মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামায়াতের এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেধরক মারপিট করেছে শিক্ষক। শিশুটি ঢেবঢেবি বাজারের ব্যবসায়ি মোতালেব হোসেনের ছেলে ।

মারপিটের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে করে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী মারপিটে ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজার কুলছুম ক্বওমি মাদ্রাসায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২মিনিট ৩০সেকেন্ডের মারপিটের ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় মাদ্রাসার শিক্ষক আবু সাইদ টুপি মাথায় সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থীর নিকট থেকে পড়া আদায় করছেন। তার বাম হাতে একটি খাতা ডান হাতে একটি বেত নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষন পর গোলাপি পাঞ্জাবি পরিহিত একজন শিক্ষকার্থীকে আঘাত করছেন। আরেকটি সাদা পাঞ্জাবি পড়া একজন শিশু শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে গুতা দিয়ে মাথা নিচু করে মাটিতে ফেলে  পশ্চাৎ পদে বেধরক পিটাতে থাকেন। এক পর্যায় অভিযুক্ত শিক্ষক রাগানিত্ব হয়ে ওই শিক্ষার্থীও বাম হাত চেপে ধরে জোরে জোরে পিটাতে শুরু করেন। মার সহ্য করতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী মাগো বলে চিৎকার করে উঠে।এতেও শিক্ষক গায়ের জোরে পিটাতে থাকে। এসময় শ্রেণীর অন্যান্য শিক্ষার্থীরা নিশ্চুপ হয়ে যায়।

শিশুটির বাবা মোতালেব হোসেন মোবাইল ফোনে জানায়, ঘটনাটি মার্চের ২৭ তারিখের। ছেলেকে বাড়ির কাজের জন্য একটি লেখা দিয়েছিল। সেই লেখা না এনে অন্য লেখা নিয়ে যাওয়ায় এমন মারপিট করেছে। আমি ১৯এপ্রিল সোমবার দুপুরে ফেসবুকে ভিডিওটি দেখে আতকে উঠি। বাড়িতে গিয়ে ছেলের কাছে সব ঘটনা শুনতে পাই। ছেলে হুজুরের ভয়ে এতোদিন আমাদের বিষয়টি জানায়নি। ছেলের কাছে তিনি আরও জানতে পারেন মারপিটের কথা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুজুর ভয় দেখিয়েছে।

মোতালেব হোসেন আরও বলেন, আমার ছেলে ছাড়াও আরও তিন চারজন শিক্ষার্থীকে ওই হুজুর একইভাবে নির্যাতন করেছে বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সোমবার বিকেলে মিটমাট করার জন্য বসার কথা ছিল। কিন্তু আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো: আবু সাইদ জানান, ঘটনাটি প্রায় দেড় দুইমাস আগের। সেখানে দ্বিতীয় জামাতের কোন শিক্ষার্থী ছিল না। যারা ছিল তারা তৃত্বীয় জামাতের শিক্ষার্থী। পরিক্ষা চলার সময় শিক্ষার্থী আমার সাথে বেয়াদবি করায় একটু শাসন করেছি।

মাদ্রাসার প্রধান মৌলভি শিক্ষক মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক দেড় বছর থেকে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। দ্বিতীয় জামায়াতের ওই শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে বাদ আছর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী লাম মিয়ার জেঠাকে নিয়ে একটা বৈঠক হয়েছে। ওই শিক্ষক আবু সাইদকে বহিস্কার করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা জানান,বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি, ঘটনার সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে মাদ্রাসা চালু রাখা এবং শিশু নির্যাতনের অভিযোগসহ দুটি মামলা করা হবে।

মুনিয়া

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন