হুমায়ুন আজাদের ৭৫তম জন্মদিন আজ
বাংলা সাহিত্যের প্রথা ভাঙার রূপকার বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় হুমায়ুন আজাদের ৭৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যে প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে হুমায়ুন আজাদ যোগ করেন এক ভিন্ন মাত্রা। তার সমস্ত বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে, তার প্রবচনগুচ্ছ এ দেশের যুক্তিবাদী পাঠকসমাজকে করে তুলেছে সচেতন।
হুমায়ুন আজাদের লেখাতে বাঙালি মুসলমান সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে যুক্তিনির্ভর বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ভিন্ন মতবাদ তুলে ধরা হয়েছে। এতে করে তিনি যেমন নন্দিত হয়েছেন, আবার নিন্দিতও হয়েছেন। তবে কুসংস্কারহীন এক আধুনিক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন সবসময়।
কিন্তু মৌলবাদীরা তার স্বপ্নকে সত্যি হতে দেয়নি। তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং পরবর্তীকালে মৃত্যুর মাধ্যমে তার মতবাদকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক ও কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই।
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতি ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। তিনি ৭০টির বেশি বই লিখেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন ধারা।
ছাত্রজীবনে হুমায়ুন আজাদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি ১৯৬২ সালে রাঢ়িখাল স্যার জে সি বোস ইনস্টিটিউশন থেকে পাকিস্তানের মধ্যে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় ক্ষেত্রে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের ওপর আক্রমণ করেন ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে ১১ আগস্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ুন আজাদ পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী শিশু-সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৪) এবং ২০১২ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেয়া হয়।
এএ