আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ভারতের দিল্লির পার্ক খোলা মাঠ ও পার্কিং লটে অস্থায়ী শ্মশান

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষের মৃত্যুতে ভারতের রাজধানী দিল্লি এখন এক আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাজধানী দিল্লির অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে খোলা মাঠ, পার্ক— এমনকি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাতেও অস্থায়ী শ্মশান তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  কারণ যেসব সরকারি শ্মশান দিল্লিতে রয়েছে, তারা আর চাপ নিতে পারছে না।

সোমবারও দিল্লিতে সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৮০। শহরের হাসপাতালগুলোতে জায়গা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।  আইসিইউ বেড খালি নেই।  চরম সংকট চলছে অক্সিজেন ও প্রাণরক্ষাকারী ওষুধের। 

এর মধ্যে দেশজুড়ে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু।  সোমবারও ভারতে নতুন কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪। তার আগের দিনে ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১। যদিও ধারণা করা হচ্ছে— প্রকৃত সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।

সরকার কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করছে বলেও বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।। ভারত এবং ভারতের বাইরে নির্ভরযোগ্য বহু পত্রপত্রিকায় মৃতের সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার কথা প্রমাণসহ প্রকাশ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ভোপাল শহরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ১৩ দিনে কোভিডে মৃত্যুর সরকারি সংখ্যা মাত্র ৪১ হলেও তাদের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই একই সময়ে ভোপালে এক হাজারেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।

শহরের চিকিৎসক জিসি গৌতমকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, অনেক মৃত্যু সরকারি রেকর্ডে তোলা হচ্ছে না। সরকার চাইছে না জনমনে ভীতি তৈরি হোক।

গুজরাটের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক সন্দেস তাদের সংবাদদাতাদের রাজ্যের বিভিন্ন শ্মশান এবং গোরস্তানে পাঠিয়ে দেখেছে, সরকার মৃত্যুর যে সংখ্যা দিচ্ছে প্রকৃত মৃত্যু তার কয়েকগুণ বেশি। পত্রিকাটি লিখছে—  গুজরাটে প্রতিদিন গড়ে ৬১০ জন মারা যাচ্ছে।

একই অভিযোগ আসছে উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির বেলাতেও। এক অনুসন্ধানে ভারতের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনডিটিভি দেখতে পেয়েছে, এক গত সপ্তাহে দিল্লিতে সরকারের দেওয়া হিসাবের চেয়ে ১১৫০ জন বেশি রোগী মারা গেছেন। পুরো দেশজুড়ে এমন অনেক অনুসন্ধানে মৃত্যু গোপন করার একই ধরনের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

অনেক শহরে শ্মশানগুলো শবদাহ করার নজিরবিহীন চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শ্মশানকর্মীদের দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে।  দাহ করার জন্য কাঠের জোগাড়, সেগুলো সাজানোর ভার মৃতের স্বজনদের ঘাড়ে এসে পড়ছে।

অসুস্থ স্বজনকে নিয়ে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মানুষ। মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে দাহ করার জন্য তীব্র গরম আর চিতার আগুনের হলকার মধ্যে পিপিইতে মোড়া স্বজনদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

দিল্লির সারাই কালে খান শ্মশানের ভেতর খালি জায়গায় গত কদিনে নতুন ২৭টি দাহ করার বেদি তৈরি করা হয়েছে।  শ্মশানটির লাগোয়া পার্কে আর ৮০টি বেদি তৈরি হয়েছে।

যমুনা নদীর তীরঘেঁষা এলাকাগুলোতে অস্থায়ী শ্মশান তৈরির জন্য জায়গা খুঁজছে দিল্লি পৌর কর্তৃপক্ষ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন