আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

ভারতে চার শ’ টন অক্সিজেন দিলেন এক সময়ের কমলা বিক্রেতা

ভারতে একটা সময় রেল স্টেশনে কমলা বিক্রি করে সংসারের খরচ মেটানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন চার ভাইবোন। বিভিন্ন কাজ করে সংসারের জন্য উপার্জন করতেন তাদের মা-ও। কাজ শেষে প্রতি সন্ধ্যায় সন্তানদের সঙ্গেই বাড়িতে ফিরতেন তিনি। সেই চার ভাইবোনের একজন প্যায়ারে খান। একসময় অর্থের জন্য অটোরিকশাও চালিয়েছেন তিনি। সময়ের আবর্তে আজ তিনি ৪০০ কোটি রুপির সংস্থার মালিক। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে সেখানে মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্যায়ারে খান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা ও টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন দান করেছেন স্টেশনে কমলা বিক্রেতা থেকে পর্যায়ক্রমে কোটিপতির তালিকায় নাম লেখানো প্যায়ারে খান। ইতোমধ্যে ৮৫ লাখ রুপির ৪০০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন দান করেছেন তিনি। এছাড়া মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের বাইরে ও ভেতরে একাধিক হাসপাতালে সাহায্যও করেছেন তিনি। গাড়ি পরিষেবাও দিয়ে যাচ্ছেন বিনা ভাড়ায়।

প্যায়ারে খান জানান, রমজান মাসে জাকাত হিসেবে দেওয়া এসব সহায়তা মনুষ্যত্বের জন্য করছেন তিনি। বলেন, আমি অক্সিজেন সেবার মাধ্যমে সমাজের সেবা করতে পারি, যা এই সংকটের সময় সব সম্প্রদায়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে। প্রয়োজনে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্যায়ারে খান।

মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের তাজবাগের বস্তিতে জন্ম প্যায়ারে খানের। নাগপুর রেল স্টেশনের বাইরে ১৯৯৫ সাল থেকে কমলা বিক্রি করছিলেন তিনি। এরপর একটি কুরিয়ার সংস্থায় ড্রাইভারের কাজ পান। এক সময় ওড়িষায় গাড়ি দুর্ঘটনায় কাজ হারান। এরপর অটো চালিয়ে উপার্জন করতে থাকেন প্যায়ারে খান। সংগীতের প্রতিও তার ছিল প্রবল আগ্রহ। তাই শিখেছিলেন কিবোর্ড বাজানোও। পরে নাগপুর মেলোডি মেকারস নামে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

অর্থ উপার্জনের চিন্তা থেকে একসময় সংগীতের সরঞ্জাম বিক্রি এবং টাকা ধার করে ছোট একটি বাস কেনেন। কিন্তু টেকেনি সেই ব্যবসা। তবে, ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে সরে যাননি প্যায়ারে খান। ২০০৪ সালে ২৪ বছর বয়সে ট্রাক কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাঁকে। পরে একটি ব্যাংক থেকে ১১ লাখ রুপি ঋণ পান। সেই অর্থ দিয়ে ট্রাক কেনেন। এরপর দুই বছরের মাথায় ঋণ শোধ করেন।

ঋণ নিয়ে ট্রাক কেনা প্যায়ারে খানের বর্তমানে ৩০০টি ট্রাক রয়েছে। এছাড়া ভাড়া নিয়েছেন কয়েক হাজার ট্রাক। আশমি রোড ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে তার একটি সংস্থা রয়েছে। ভারতের ১০টি এলাকায় তার অফিস। তার সংস্থায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে অন্তত ৫০০ জন। তার ট্রাক বিভিন্ন দেশে চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান রয়েছে। ধীরে ধীরে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া প্যায়ারে খান আজ দেশের ক্রান্তিকালে হয়ে উঠেছেন সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন