আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

ভারতে সতর্ক করেছিল বিজ্ঞানীরা, আমলে নেয়নি সরকার

গেল এপ্রিল মাসজুড়ে করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালায় ভারতে। সংক্রমিত হয় প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। মে মাসের শুরুতে একটুও থামেনি করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি।

অথচ গেল মার্চের শুরুতেই সরকারকে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক করেছিল একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা দলের পাঁচ বিজ্ঞানী। কিন্তু, বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তাকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি সরকার। নেওয়া হয়নি বাড়তি কোনো ব্যবস্থা। এমন অভিযোগ করেছে চারজন বিজ্ঞানী।

রয়টার্স জানায়, ইতোমধ্যে ভারতে ধর্মীয় কুম্ভমেলায় অংশ নেন লাখ লাখ মাস্কবিহীন পুণ্যার্থী। বিপুল জনসমাগম করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিরোধীদলের নেতারা। দিল্লিতে কৃষি আইন বাতিলে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নেয় লাখো কৃষক।

ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ জেনেটিকস কনসোর্টিয়াম-ইনসাকোজ গেল মার্চের শুরুতে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্কবাণী দেয়। এই ইনসাকোজ ভারতের প্রধান প্রধান ১০টি ল্যাব একসঙ্গে ব্যবহার করছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজিব গৌবকে সতর্কবার্তার কপি পাঠায় ইনসাকোজ। তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে দায়বদ্ধ।

তবে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের পেছনে নতুন ভ্যারিয়েন্ট কতটা দায়ী তা নিয়ে এখনও গবেষণা করছে ইনসাকোজ। ব্রিটেন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে উদ্বেগসৃষ্টিকারী ভ্যারিয়েন্ট ঘোষণা করেছিল ভারতের বেলায় তেমনটা ঘোষণা দেয়নি। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে গেল ২৭ এপ্রিল ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি. ১.৬১৭কে ভারতের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় দ্রুত সংক্রামক বলে জানায় ডব্লিউএইচও।

রয়টার্সকে ইনসাকোজের প্রধান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডা. শহিদ জামিল বলেন, কিছু কিছু নমুনায় আমরা কিছু মিউটেশন দেখতে পেয়েছি যেগুলো হয়তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। ল্যাবে সেই ভাইরাসগুলোকে কালচার না করা পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এখন এর কারণেই এতটা বাড়ছে তা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। তবে আমরা এটি চিহ্নিত করতে পারায় এর ওপর নজর রাখতে পারছি।

ইনসাকোজ বিজ্ঞানী অনুরাগ আগারওয়াল বলেন, জানুয়ারিতে পাঞ্জাবে ব্রিটেনের ভ্যারিয়েন্ট বি. ১.৬১৭ পাওয়া যায়। ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এনসিডিসি এবং ইনসাকোজের মতে পাঞ্জাবে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের পেছনে ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট দায়ী ছিল। পাঞ্জাবে ২৩ মার্চ লকডাউন দেওয়া হয়। তবে এর আগেই অনেক বয়স্ক কৃষক সেখান থেকে দিল্লিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

দিল্লির কৃষক আন্দোলনকে সুপ্ত টাইম বোমার সঙ্গে তুলনা করেন ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্ট্রিগেটিভ বায়োলজির প্রধান অনুরাগ আগারওয়াল।

ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজের গবেষক শান্তা দত্ত বলেন, আমাদের দেশের মানুষ বিজ্ঞানীদের চেয়ে রাজনীতিবিদদের কথা বেশি শোনে।

ইনসাকোজ বিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির পরিচালক রাকেশ মিশ্র জানান, যথারীতি দেশের বিজ্ঞানীদের নিরাশ করা হয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীদের গুরুত্ব দিলে আমরা ভালো করতে পারতাম।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন