আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

জনপ্রতিনিধি যখন ঠিকাদার

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় সময়সীমা পার হলেও দুটি রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের এ ভোগান্তির জন্য দায়ী আর কেউ নন, তাঁদের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মর্তুজা হাসান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কি ঠিকাদারি কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন? উপজেলা পরিষদ আইন (২০১১ সালের ২১ নম্বর আইন) অনুযায়ী, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান নিজ উপজেলায় এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। আইনগত ছাড়াও নৈতিকভাবে বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয়।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অযোগ্যতা সম্পর্কে ওই আইনে বলা আছে—সংশ্লিষ্ট উপজেলা এলাকায় সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য
বা সরকার কর্তৃক গৃহীত কোনো চুক্তির বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য, তাঁর নিজ নামে বা তাঁর ট্রাস্টি হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নামে বা তাঁর সুবিধার্থে বা স্বার্থ আছে এমন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়াটা তাঁর অযোগ্যতা।

প্রথম আলোয় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। একইভাবে আজমিরীগঞ্জ-বদলপুর-পাহাড়পুর সড়কের কাজ গত বছরের মার্চ ও জুলাইয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ না হওয়ায় বৃষ্টিতে সড়কগুলো কর্দমাক্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও যানবাহনের চালকেরা ক্ষুব্ধ হলেও তাঁদের বলার কিছু নেই। এ ছাড়া নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ উঠলেও তা বলার সাহস স্থানীয় জনগণের নেই।

খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান ঠিকাদার হওয়ায় স্থানীয় লোকজন শুরুতে ধারণা করেছিলেন যে মানসম্মত কাজ হবে এবং নির্ধারিত সময়ে তা শেষ হবে। কিন্তু ঘটেছে এর উল্টো। রাস্তা দুটি নির্মিত হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতায়। মান বজায় রেখে চুক্তি অনুযায়ী দুটি সড়কের নির্মাণকাজ না চলায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে একাধিক চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এসব চিঠি যিনি পেয়েছেন, তিনি একই সঙ্গে ঠিকাদার এবং ওই উপজেলার চেয়ারম্যান।

যদিও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে রাস্তার নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারেননি। তা ছাড়া এখন পাথরের সংকট থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বলেও তাঁর দাবি।

এখানে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসে। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের নিজ উপজেলায় ঠিকাদারি করাটা কতটা যৌক্তিক? উপজেলা নির্বাচন হওয়ার আগে তিনি দরপত্র জমা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সেই উন্নয়নকাজ করতে পারেন কি? আবার ঠিকাদার হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিলেন কীভাবে? এ উন্নয়নকাজ শেষ করতে না পারার শাস্তি কী এবং জনদুর্ভোগের জন্য চেয়ারম্যানের দায় কতটুকু? এসব প্রশ্ন খতিয়ে দেখা এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন