আর্কাইভ থেকে পরামর্শ

সাইক্লিং সারাবে শরীরের কঠিন সব রোগ

আনন্দের জন্য কিংবা কাজের তাগিদে, নিয়মিত সাইকেল চালানোর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা আছে। কঠিন সব রোগ সারে সাইকেল চালালে। প্রতিদিন সাইকেল চালালে যেমন আপনার খরচ বাঁচবে; ঠিক তেমনই শরীর থাকবে সুস্থ। নিয়মিত সাইকেল চালালে খুব ভালো ব্যায়াম হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইক্লিং একটি দুর্দান্ত ওয়ার্কআউট, যা আপনাকে সক্রিয় রাখে। এটি শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারণ করতে ও ফিট থাকতে সাহায্য করে।

শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাইক্লিং করার বিকল্প নেই। এ ছাড়াও এর বিশেষ কিছু উপকার আছে। যেমন সাইক্লিং করার মাধ্যমে আপনার বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যায় এবং পেশি তৈরি হয়। এমনকি আপনি যখন বিশ্রাম নিবেন তখনও দেহ ক্যালোরি পোড়াতে ব্যস্ত থাকবে। 

সাইকেল চালালে শরীর কীভাবে সুস্থ থাকবে জেনে নিন-

>> সাইকেল চালালে পায়ের শক্তিও বাড়ে। এতে আপনার পায়ের পেশি শক্তিশালী হয়। সাইক্লিংয়ের কর্মক্ষমতা আরও বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার স্কোয়াট, লেগ প্রেস এবং লুঞ্জের মতো ভারোত্তোলন অনুশীলন করুন।

>> সাইক্লিং করার ফলে কোমর এবং পেটের মেদ কমে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেকেরই ওজন বাড়লে ভুরি হয়ে থাকে। তারা নিয়মিত সাইকেল চালালে দ্রুত ভুরি কমাতে পারবেন। যেমন  একজন ৮০ কেজি ওজনের ব্যক্তি এক ঘণ্টা সাইকেল চালানোর মাধ্যমে প্রায় ৬৫০ ক্যালরি ক্ষয় করতে পারেন, যা ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

>> মানসিক চাপ দূর করতেও সাইক্লিং উপকারী। এর ফলে চাপ, হতাশা বা উদ্বেগ সহজেই দূর হয়। কারণ সাইকেল চালানো একটি দুর্দান্ত ওয়ার্কআউট হিসেবে কাজ করে। আর যেকোনো ধরনের শরীরচর্চার ফলেই হ্যাপি হরমোনের সিঃসরণ ঘটে।

>> বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা হাতাশায় ভুগেন; তাদের জন্য সাইক্লিং হতে পারে উপকারী। সাইক্লিং জীবনের নিয়মিত অংশে পরিণত করলে আপনি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।

>> ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থতায়ও সাইক্লিং হতে পারে সেরা উপায়। স্তন ক্যান্সারসহ বেশ কিছু ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় সাইক্লিং। ২০১৯ সালের গবেষণা অনুসারে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিতসার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কমায় সাইক্লিং।

>> সকালে ঘুম থেকে উঠেই যদি আপনি কিছুক্ষণ সাইক্লিং করেন; তাহলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাবে। এর ফলে সারাদিন কাজে মনোযোগী হতে পারবেন, সেইসঙ্গে এনার্জিও পাবেন অনেক। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে সাইক্লিং করলে মেদ কমে, সহনশীলতা বাড়ে এবং শক্তি ও বিপাকক্রিয়ার উন্নতি ঘটে।

>> ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ৬ সপ্তাহ ধরে সকালের নাস্তার আগে সাইক্লিং করেছেন; তাদের ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়ার উন্নত ঘটেছিল।

>> নিয়মিত সাইক্লিং করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো কার্ডিয়াক সমস্যা রোধ করা যায়। সাইক্লিং করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে। হৃদ্যন্ত্রের ফিটনেস বাড়াতে বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট সাইকেল চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এটা হাঁটা বা জগিং করার মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম, যা হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

>> হাড়ের জোড়া বা সন্ধির ব্যথা কমাতেও সাইকেল চালানো উপকারী। সাইকেল চালালে হাঁটুর ব্যথা কমে। তাছাড়া এই অভ্যাসের ফলে পায়ের মাংসপেশির শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ে।

>> সাইকেল চালানোর ফলে ভারসাম্য, ভঙ্গি ও মনোযোগ বাড়ে। আপনি যখন নিজের দেহকে স্থিতিশীল করেন এবং সাইকেলটি সোজা রাখেন; তখন আপনার সামগ্রিক ভারসাম্য, সমন্বয় এবং ভঙ্গিমার উন্নতি ঘটে। এর ফলে হঠাৎ পড়ে গিয়ে ফ্র্যাকচার হওয়ার ঘটনা কম ঘটে।

>>মনোযোগ বাড়ানো ও লক্ষ্য স্থির করার মতো মানসিক গুণ তৈরিতে সাইকেল চালানো ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে প্রমাণ রয়েছে। নিয়মিত সাইক্লিং করলে মানসিক অবসাদ বা বিষণ্নতা দূরে থাকে।

>> আপনি যদি সাইকেল চালাতে না পারেন; তাহলে ঘরেই ব্যায়াম করার জন্য সাইকেল কিনে নিন। নিয়মিত সাইকেল চালালে আপনি উপকার পাবেন। 

সাবধানতা

সাইকেল কেনার সময় নিরাপত্তা গিয়ার ঠিক আছে কিনা দেখে কিনুন। সব সময় রাস্তার একপাশ দিয়ে সাইকেল চালাতে হবে। এছাড়া বাই সাইকেল চালালেও ট্রাফিক আইন মেনে চলুন ও হেলমেট ব্যবহার করুন। সাইকেল চালানোর সময় অনেক ঘাম হয়। তাই ক্লান্তি দূর করতে সঙ্গে এক বোতল পানি রাখুন।  

৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস। জলবায়ু এবং স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাবের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়। সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে একটি টেকসই পরিবহনের সমাধান এবং উন্নত পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিবসটি উদযাপন করা হয় সাইকেল মহড়ার মাধ্যমে।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রসংঘর সাধারণ সভা ৩ জুন তারিখটিকে বিশ্ব সাইকেল দিবস হিসাবে উদযাপন করতে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ব সাইকেল দিবস সমগ্র বিশ্বে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, বয়স ভেদে উদযাপন করা হয়।

সূত্র: হেলথলাইন, বাইসাইকেলিং, বাইকরাইডার, সাইকেলিংউইকলি

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন