আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাজেটে কালো টাকা সাদার সুযোগ না থাকায় ‘সতর্ক সাধুবাদ’-টিআইবির

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ায় সরকারকে ‘সতর্ক সাধুবাদ’ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

একই সংগে  সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এই সুবিধা যেন অন্য কোনো উপায়ে আয়কর অধ্যাদেশে রাখা না হয় সে বিষয়েও বলছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হলে এর প্রতিক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব জানায় টিআইবি।

বিবৃতিতে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট পথ রেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে দুর্নীতি বিরোধী এ সংস্থা। একই সংগে কোভিড নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বরাদ্দ বৃদ্ধিই শুধু নয় নিশ্চিত করতে হবে সুশাসন।  

বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ সা দেবার সিদ্ধান্তকে সরকারের বোধোদয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।  

করোনাকালীন সময়ের ‘২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩৩ হাজার কোটি টাকা (যা মোট বাজেটের প্রায় ৭ শতাংশ) রাখা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় এখনো তা অনেক কম বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। বলেন,  ‘ক্রমাগত দুর্নীতি ও ন্যায়সঙ্গত ব্যয় সক্ষমতার অভাবে এই বরাদ্দও সঠিকভাবে ব্যয়িত না হওয়ার প্রবল ঝুঁকি আছে, যা থেকে উত্তরণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো পথরেখা দেওয়া হয়নি, যা হতাশাব্যঞ্জক; যখন কিনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে প্রকাশিত অকল্পনীয় ও আকাশচুম্বি দুর্নীতির লাগাম টানতে এ খাতটি ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই।’

করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা কার্যক্রমে সরকারের বিনিয়োগ ভাবনাকে সাধুবাদ দিয়েছে টিআইবি প্রধান।  বলেন বরাদ্দ দেয়াটাই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়। এবং স্বাস্থ্যখাতে জেঁকে বসা দুর্নীতি যেন কোনোভাবেই এতে সুযোগ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে করোনোর টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সরকার স্বচ্ছ ক্রয়প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে এবং জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

 

শহরের বাইরে হাসপাতাল সেবার পরিধি বাড়াতে ১০ বছরের জন্য কর রেয়াত একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত , এর ফলে মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করে টিআইবি।

তবে সংস্থাটি উদ্বেগ জানিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ বরাদ্দে। করোনাকালীন বাস্তবতা বিবেচনায় সরকার অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে জরুরি সেবামুলক খাতসমূহে বাস্তবসম্মত বরাদ্দ রাখবে আশা কোরেছিলো টিআইবি। বাজেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে জনপ্রশাসন (৭ দশমিক ৬ শতাংশ) আর এর সাথে প্রতিরক্ষা ব্যয় যোগ করলে পরিমানটি প্রায় ১৪ ভাগ ছাড়িয়ে যায়। বছর বছর বরাদ্দ বাড়ানো হলেও জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কার্যকর কৌশলের অনুপস্থিতি হতাশাজনক। টিআইবি প্রধান বলেন, “প্রতিরক্ষা খাতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়নেও কোনো ঘোষণা না থাকা সুশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন মাত্র।”

টিআইবি আশা করে, বাজেট বাস্তবায়ন, বিশেষ করে সরকারি ক্রয়খাতসহ সকল প্রকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কঠোর শুদ্ধাচার নিশ্চিত করবে সরকার।  

মুক্তা মাহমুদ

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন