আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

জাতীয় সংসদে ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা প্রদান ও ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে।

সোমবার (৭ জুন)  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল 'নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২১' উত্থাপন করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য এ সম্পূরক বিল আনা হয়।

চলতি অর্থ বছরে মূল বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭লাখ ৩২ হাজার টাকা। আর ২৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ২৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এ অর্থ হ্রাস- বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৯৮৩ কোটি টাকা।

বিল পাসের আগে বিধান অনুযায়ি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দাবিসহ ১৯টি মঞ্জুরী দাবি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীগণ সংসদে উন্থাপন করলে পৃথক পৃথকভাবে পাস করা হয়। এ সব দাবির ওপর বিরোধীদলের সদস্যরা মোট ১৯০টি ছাটাঁই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের দুটি দাবির ওপর আলোচনা হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবে আলাচনা করেন, জাতীয় কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান, এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন ও রুমীন ফারহানা ।

সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৯০ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৫০ কোটি ৪৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ খাতে । তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০৫ কোটি ৬৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় খাতে। আর চতুর্থ সর্বোচ্চ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা, পঞ্চম সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে রয়েছে।

আলোচনা চলাকালে সমালোচনার মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম প্রশ্নে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিদের নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম, দুর্নীতির প্রসঙ্গও উঠে আসে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ১৯টি মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ১৯টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৪৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪২ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে ২৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ নিট দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ১২৬টি চলমান এবং ৩১টি নতুন প্রকল্পে অর্থের সংস্থান করায় এ অতিরিক্ত বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আর সবচেয়ে কম ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এ বিভাগের ১২টি চলমান প্রকল্পের অর্থের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দরকার।

২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মহামারির সঙ্কটে সেই গতিপথ ঠিক থাকেনি। সংশোধনে তা ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

জাতীয় সংসদে গত ৩ জুন উপস্থাপন হয় ২০২১-২২ অর্থবছরের সাধারণ বাজেট। একইসঙ্গে উপস্থাপন করা হয় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট। বরাদ্দ ব্যয়ের চেয়ে কোনো মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যয় বৃদ্ধি হলে বা বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পারলে তা অনুমোদন করতে যে বিল পাস করা হয় বা নতুন যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাই মূলত সম্পূরক বিল।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন