আর্কাইভ থেকে জাতীয়

ছেলেটার আর কেউ রইল না: নিহত রুবিনার ভাই

বাবা মাহবুবুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে দুই বছর আগে। মা রুবিনা আক্তারই ছিল তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। গেল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) হারাতে হলো সেই মা’কেও। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাকরিচ্যুত শিক্ষক আজহার জাফর শাহ’র প্রাইভেটকারের নিচে আটকে পড়ে নিহত হন রুবিনা আক্তার (৪৫)। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই বাবাহারা একমাত্র সন্তান আরাফাত রহমান (রোহান) কেঁদেই চলেছেন।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আজিমপুর কবরস্থানে রুবিনার দাফনের পর এ কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন রুবিনার বড় ভাই রোহানের মামা জাকির হোসেন।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'করোনায় রোহানের বাবা মারা যান। এরপর স্কুলপড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন রুবিনা। মা-ই ছিল রোহানের একমাত্র আশ্রয়স্থল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। ছেলেটার আর কেউ রইল না। ভাগিনা আমার একা হয়ে গেল।'

জাকির হোসেন বলেন 'কাল থেকে ভাগিনার কান্না থামছে না। কী বলে সান্ত্বনা যে দেব। ছেলেটা বাবা হারাল, মাও হারাল। এতিম হয়ে গেল। আর এত নিষ্ঠুর মৃত্যু হলো বোনের।' তবে ভাগিনা তার সন্তান হয়ে থাকবে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, 'রোহান আমার নিজেরই সন্তান। সে আমার সন্তান হিসেবে থাকবে।'

বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, 'খুব নির্মমভাবে বোনটার মৃত্যু হয়েছে। আমার বোনকে বাঁচাতে পারলাম না। মোটরসাইকেলে আমার হাজারীবাগের বাসায় আসতেছিল রুবিনা। শাহবাগ পার হয়ে সড়কে তাকে প্রাইভেটকার ধাক্কা দেয়। তারপর নীলক্ষেত পর্যন্ত তাকে টেনে নিয়ে যায়। তার কী যে কষ্ট হচ্ছিল আমি অনুভব করি। আমার বোনটা বাঁচতে পারত। আমরা মামলা করেছি। সঠিক বিচার আমরা চাই।'

রুবিনার বোন সুলতানা লিপি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর রুবিনা একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। সেও যে চলে যাবেন, এটা কখনো ভাবতে পারিনি।

উল্লেখ্য, প্রতি সপ্তাহে নিজ বাসা তেজগাঁও তেজকুনি পাড়া থেকে হাজারিবাগে যেতেন গৃহবধূ রুবিনা আক্তার। তার স্বামী মারা গেছেন দু বছর আগে। তাদের এক ছেলে রয়েছে। সে ক্লাস এইটে পড়ে।

অন্যান্য সপ্তাহের মতো শুক্রবার ননদের স্বামীর মোটরসাইকেল চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে হাজারিবাগে যাচ্ছিলেন তিনি। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে চারুকলা অনুষদের বিপরীতে পাশের রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় পড়ে যান রুবিনা। চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রাইভেটকারের নিচে আটকে পড়েন রুবিনা। টিএসসি, ভিসি চত্বর হয়ে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের কাছাকাছি পর্যন্ত তাকে এভাবেই টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি।

এরপর লোকজন গাড়িটি আটকে নিচ থেকে রুবিনা আক্তারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাড়ি আটকের পরেই চালক আজাহার জাফর শাহকে মারধর করেন পথচারীরা। শাহাবাগ থানার পুলিশ পরে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক। আহত অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন