আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সে রাতে পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিল (ভিডিও)

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে এই অভিযোগ করেন পরীমনি, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া রীতিমতো তোলপাড় চলছে। এদিকে স্ট্যাটাস দেখার পর পর গণমাধ্যম কর্মীরা পরীমনির বনানীর বাসায় গিয়ে জড়ো হন।

সেখানে সাংবাদিকদের সামনেই অভিযুক্তের নাম ও কখন, কোথায় তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয় তার বর্ণনা দেন।

রাত সাড়ে ১০টায় বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের সামনে পরীমনি জানান, গত ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। ক্লাবটির নাম উত্তরা বোট ক্লাব। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নাম নাসিরউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজেকে ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট পরিচয় দেন। নাসিরউদ্দিনসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা তার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। মাধুরী দিক্ষিক বলে নাচতে বলে। এক সময় তাদের একজন হঠাৎ জোর করে পরীমনির মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় পরীমনিকে মারধর করে এবং তার সঙ্গে থাকা কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকেও মারধর করে তারা।

নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমনি।

এই ঘটনার পর পরীমনি বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তারা অভিযোগ রেকর্ড করেননি। এরপর হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।

পরীমণি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?

অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে উপস্থিত সাংবাদিকদের পরীমনি বলেন, আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন। সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!

কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পরীমনি বলেন, আপনারা আমাকে ৫ মিনিট কাঁদতে দেখছেন। কিন্তু আমি গত চারদিন ধরে কাঁদছি। ওই লোক আমাকে কি সব বিশ্রি কথা বলেছিলো। আমি বলতে পারছি না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার জায়গায় আপনারা থাকলে হয়ত কথাও বলতে পারতেন না। আমি ওইখানে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ওয়েটাররা ধরে আমাকে নামিয়ে দেয়। সিসি ক্যামে সব রেকর্ড আছে। আমার মনে হয়েছে বিষয়টি তাদের পূর্বপরিকল্পিত।

একপর্যায়ে অঝরো কাঁদতে কাঁদতে পরীমনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে আপনারা জেনে রাখুন, আমি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নই। যদি মরে যাই তবে বুঝবেন, আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। মরলে আমি আমার বিচার নিয়ে মরব।’

পরীমণির ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলনে বলা বক্তব্যের প্রসঙ্গে পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘পরীমণির ফেসবুক স্ট্যাটাস পুলিশ সদর দফতরের নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এ অভিনেত্রীর অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তিনি পুলিশের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সেবা পাবেন। উপযুক্ত বিচার পাবেন।’

এর আগে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেওয়া পরীমনির স্ট্যাটাসটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।

শুনুন পরিমনির নিজ মুখে...

শুভ মাহফুজ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন