প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য ট্রাইসাইকেলের আকুতি অসহায় পিতার
শারিরিক প্রতিবন্ধী সোহেল রানা (১৪) তার দুই হাতের কুনই ও দুই পায়ের আঁকা-বাঁকা হাঁটুতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে চলে। হাঁটু গেড়ে বসা ছাড়া দাঁড়ানোর উপায় নেই তার। অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকায় শারিরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি তাকে। হামাগুড়ি দিয়েই বাড়ী থেকে দেড় কিলোমিটার দুরের বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করে সে। লেখাপড়া করে সে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। ঘোচাতে চায় গরীব বাবা-মায়ের দুঃখ কষ্ট। কিন্তু হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে ভারি কষ্ট হয় তার। হুইল চেয়ারও চালাতে পারেনা ঠিকমত। তাই প্যাডেল যুক্ত ট্রাইসাইকেল এ চড়ে স্কুলে যেতে চায় সে। শারিরিক প্রতিবন্ধী এই সোহেল রানার বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী গ্রামের দিনমজুর নজরুল ইসলামের ছেলে ও রাবাইতারী এসবি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোহেলের বাবা নজরুল ইসলাম একজন দরিদ্র দিনমজুর। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সোহেল সবার ছোট। বড় ছেলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে এখন দিনমজুরি কাজ করে। ধারদেনা এবং প্রতিবেশীদের সহায়তায় অনেক কষ্টে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে নাগেশ্বরী সরকারি কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। মাত্র দেড় শতক জমিতে বসত ভিটা ছাড়া নেই কোন ফসলি জমি। তাদের সম্পদ বলতে সোহেলের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর অন্যের জমিতে দিনমজুরি দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে অতি কষ্টে চলে ৫ সদস্যের সংসার। প্রতিবন্ধী ছেলেকে তিন চাকার হুইল চেয়ার (ট্রাইসাকেল) কিনে দেয়ার সামর্থ্য নেই তার। তাদের সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী। বাবা-ছেলের কাজ জুটলে দুই বেলা খাবার জোটে, কাজ না জুটলে থাকতে হয় অনাহারে। এভাবেই অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন নজরুল ইসলাম। শত কষ্টের মাঝেও বাবা নজরুল ইসলাম খেয়ে না খেয়ে ছোট ছেলে সোহেলকে জন্মের পর থেকে চিকিৎসা করালেও তার দুই হাতের কুনই ও দুই পায়ের আঁকা-বাঁকা গুলো ভাল হয়নি। ছেলের চিকিৎসার পিছনে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করলেও তাকে পুরোপুরি সুস্থ করতে পারেনি তিনি। অসহায় এই গরীব দিনমজুর বাবার সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। সেখানে এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশুনাসহ ভরণপোষন ব্যয়ভার মিটিয়ে প্রতিবন্ধী সোহেলের জন্য একটি ট্রাই-সাইকেল কেনা নজরুল ইসলামের স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। অসহায় এই পিতার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি তিন চাকার হুইল চেয়ার (ট্রাইসাইকেল) কিনে দেবার স্বামর্থ্য। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে অসহায় এই পিতার আবেদন ছেলের জন্য একটি তিন চাকার হুইল চেয়ার( ট্রাইসাইকেল) এর জন্য আকুতি জানিয়েছেন।
সোহেলের বাবা দিনমজুর নজরুল ইসলাম জানান, মুই মানষের বাড়িতে কামলা দিয়া খাং। কামলা খাটিয়া যা পাং তা দিয়া ৫ জনের সংসার অতিকষ্টে খায়া না খায়া বেঁচে আছং বাহে! অভাবের জন্য ছোট ছেলেটাক এখ্যান ট্রাইসাইকেল কিনে দিবার পাং না। সরকারে হোক আর অন্য কাইও যদি মোর ছেলেটাকে এ্যাখান তিন চাকার হুইল চেয়ার দিলে হয় বাহে মুই খুব খুশি হনু হয়। ছেলেটার এমন কষ্ট দেখিয়া ঘুমবার পাং না বাহে! কান্না জড়িত কন্ঠে এ ভাবেই আ লিক ভাষায় কথাগুলো তিনি। তিনি আরও বলেন, সমাজের কোন বিত্তবান দানশীল ব্যক্তি যদি একটা তিন চাকার হুইলচেয়ার কিনে দিতো তাহলে ছেলেটার কষ্ট লাঘব হতো। সোহেলের বাবার বিকাশ নম্বর-০১৩১০১৮৫৬৭২
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সোহেলকে সহায়তা করা হবে।