কন্ডিশনার বনাম হেয়ার মাস্ক
একজন নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন হলো তার চুল। আর তাই সুস্থ আর মজবুত চুল পেতে হলে কিছু বিষয়ের সঙ্গে কিছুতেই আপোস করা যাবে না।
নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে চুল ছেঁটে ফেলা, নিয়মিত শ্যাম্পু, হিট টুলসের ব্যবহার কমিয়ে আনা, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করা এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়া খুব জরুরি। ঠিক তেমনি হেয়ার কেয়ার রুটিন তৈরির ভিতও জরুরি। চুলের যত্ন সংক্রান্ত অন্য বিষয়গুলো বোঝা গেলেও আমরা অনেকেই ময়শ্চারাইজিং আর হাইড্রেশনের তফাতটা বুঝি না। ফলে চুল শুকনো, রুক্ষ হয়ে যায়, চুল ঝরতে থাকে, কমে যায় চুলের চকচকে ভাবও।
এই সমস্যার সমাধান করা যায় সহজেই, যদি আপনার চুলের যত্নের রুটিনে থাকে দুটি জরুরি উপাদান -কন্ডিশনার আর হেয়ার মাস্ক।
কখনও কি মনে প্রশ্ন জেগেছে আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী কী ব্যবহার করবেন, কন্ডিশনার নাকি হেয়ার মাস্ক? কিংবা দুটোই কি ব্যবহার করা উচিত, ব্যবহার করলে কখন আর কীভাবে? এ সব প্রশ্ন যদি আপনারও মনে এসে থাকে, তা হলে এই লেখা আপনার জন্য। সব প্রশ্নের উত্তর পেতে পড়তে থাকুন- হেয়ার কন্ডিশনার কী? হেয়ার কন্ডিশনার হল আর্দ্রতা সঞ্চারকারী, অর্থাৎ ময়শ্চারাইজিং প্রডাক্ট যা শ্যাম্পু করার পর চুলে লাগানো হয়। কন্ডিশনারের প্রাথমিক কাজ হল চুলের একেবারে ওপরের স্তর, অর্থাৎ কিউটিকলের চারপাশে একটা আস্তরণ তৈরি করা এবং কিউটিকলকে ধুলো, ধোঁয়া, দূষণ, চড়া রোদ থেকে রক্ষা করা আর সেই সঙ্গে শুষ্ক হতে না দেয়া। কন্ডিশনার নানা উপাদান দিয়ে তৈরি হয় যা চুলে আর্দ্রতা জোগায়, পাশাপাশি রুক্ষতা বা ব্রেকেজ থেকে চুল রক্ষা করে। ফলে চুল থাকে নরম, চকচকে, জটমুক্ত এবং এরকম চুল সামলানোও সহজ।
শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার লাগানোর ধরনেও তফাৎ আছে। শ্যাম্পু লাগানো হয় পুরো চুলে, কিন্তু কন্ডিশনার লাগানো হয় চুলের মাঝামাঝি অংশ থেকে শেষভাগ পর্যন্ত। লাগানোর পর এক মিনিট পর্যন্ত অথবা বোতলে লেখা নির্দেশ অনুযায়ী অপেক্ষা করতে হবে।
নিষ্প্রাণ নির্জীব চুলে উজ্জীবিত করে তুলতে তাই চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার জরুরি। হেয়ার মাস্ক কী? হেয়ার মাস্কও চুলে পুষ্টি আর আর্দ্রতা জোগায়, রুক্ষতা কমিয়ে চুলে এনে দেয় ঝলমলেভাব। সেদিক থেকে হেয়ার মাস্ক আর কন্ডিশনার অনেকটা একইরকম। কিন্তু হেয়ার মাস্কের আরও অনেক ভূমিকা রয়েছে। পুষ্টিকর তেল, ঘন ক্রিম এবং আরও নানা চুলের পক্ষে উপকারী উপাদান দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক চুলে ময়শ্চার জোগায়, চুল কন্ডিশন করে এবং নিমেষে আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি ক্ষতি মেরামত করে চুল সুন্দর করে তোলে।
হেয়ার মাস্ক কন্ডিশনারের চেয়ে বেশি ঘন হয়। হেয়ার মাস্ক চুলে লাগানোর পর ১০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাখতে হবে। হেয়ার মাস্কে যে সব উপাদান থাকে তা যাতে চুলে পুরোপুরি শোষিত হতে পারে, সে জন্যই মাস্ক চুলে লাগিয়ে রাখতে হয় এবং চুল দৃশ্যতই স্বাস্থ্যের জেল্লায় ভরে ওঠে। আপনার চুল যদি শুষ্ক ও অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চুলে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হেয়ার মাস্ক এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন কখন- কন্ডিশনার আর হেয়ার মাস্কের তফাত তো জানলেন। চুলের যত্নে তাদের দুটি আলাদা এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং কেন এই দুটি প্রডাক্টই ব্যবহার করা উচিত, তাও নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়ে গেছে? তো চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কোন প্রডাক্টটি কখন ব্যবহার করবেন:
কন্ডিশনার
প্রতিবার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোওয়ার পরেই কন্ডিশনার লাগানো উচিত, সপ্তাহে কয়েকবার শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার লাগাতে হবে। যে দিনগুলোতে শ্যাম্পু করবেন না, সে দিনগুলোতেও কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুলকে মসৃণ,চকচকে আর জটমুক্ত রাখতে পারেন।
হেয়ার মাস্ক:
প্রতিদিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করার দরকার নেই। চুল খুব শুকনো, ক্ষতিগ্রস্ত আর রুক্ষ হলে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন। কিন্তু আপনার চুল যদি স্বাভাবিক হয়, তা হলে দু' সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। বাড়িতে আরামে বসে স্পায়ের মতো যত্ন পাওয়ার আর চুলে দরকারি পুষ্টি জোগানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল হেয়ার মাস্কের ব্যবহার।