আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

টিকার ১০ মাস পর দ্বিতীয় ডোজে সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি: অক্সফোর্ড

বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে টিকাদান কর্মসূচি। তবে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে ১০ মাসের ব্যবধান হলে সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ডের গবেষণা। অক্সফোর্ডের দাবি, দ্বিতীয় ডোজের দ্বিগুণ সুরক্ষার পাশাপাশি আরও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে অ্যান্টিবডি।

ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময় জানায়, ভ্যাকসিনের ডোজ ও ব্যবধান নিয়ে কার্যত দুই রকম জল্পনা উস্কে দিয়ে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের দাবি, তাদের তৈরি চ্যাডক্স-১ টিকা ভারতে যা কোভিশিল্ড নামে পরিচিত দ্বিতীয় ডোজ ১০ মাস পরে নিলে সবচেয়ে বেশি ভালো। এতে চার গুণ বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে। যা এক বছরেরও বেশি সময় টিকছে।

তবে গবেষণা প্রতিবেদনে তারা এ-ও বলেছে, প্রাথমিক টিকা সঙ্কট সামাল দিতে এই ডোজ-ফারাককে ফলপ্রসূ কৌশল হিসেবে দেখা যেতেই পারে।

এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিনকেই তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ প্রয়োগের অনুমতি দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি না, সম্প্রতি তা নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেন ডব্লিউএইচও’র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে অবশ্য অক্সফোর্ড দাবি করেছে, ট্রায়ালে দারুণ ফলাফল দেখিয়েছে তাদের বুস্টার ডোজও!

অবশ্য এই প্রতিবেদন নেহাতই প্রি-প্রিন্ট পাবলিকেশন। অর্থাৎ পিয়ার-রিভিউ হয়নি। তবে ভ্যাকসিনের পেটেন্ট সংস্থাই যেখানে ডোজ ও ব্যবধান বাড়িয়ে অন্তত ১০ মাসের পক্ষে প্রশ্ন করছে, স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে হইচই পড়েছে দেশ-বিদেশে। একইসঙ্গে প্রতিবেদনের জেরে সিঙ্গল-ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

একেবারে গোড়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই ভ্যাকসিন ৪-৬ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর আবারও ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকারি ভাবে জানায়, চ্যাডক্স ১-এর দ্বিতীয় ডোজ ৮-১২ সপ্তাহ পরে নিলেই বেশি কার্যকরী।

কার্যত এর পরপরই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার ফর্মুলায় তৈরি সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকার ডোজ ব্যবধান ১২-১৬ সপ্তাহ করে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই সময় ভারতে তীব্র টিকার আকাল থাকায় এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বিরোধীরা বলতে থাকে, টিকার জোগান নেই বলেই এই ডোজ পেছানোর সিদ্ধান্ত। পাল্টা বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। সঙ্গে আশ্বাস দেয়, পরবর্তী গবেষণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। অবশ্য অক্সফোর্ডের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন নিয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেনি ভারত।

টিকার দু'টি ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ালে অ্যান্টিবডি বেশি পরিমাণে তৈরি হয় কি না তার উত্তর পেতে তিন ভাগে পরীক্ষা চালায় গবেষকরা। প্রথম গ্রুপটিকে ৮-১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দু'টি ডোজ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় গ্রুপকে ১২-২৫ সপ্তাহের ব্যবধানে এবং তৃতীয় গ্রুপকে ৪৪-৪৬ সপ্তাহের ব্যবধানে দু'টি ডোজ দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, দ্বিতীয় ডোজের ২৮ দিন পর গড় অ্যান্টিবডির মাত্রা থাকছে যথাক্রমে ৯২৩, ১৮৬০ এবং ৩৭৩৮ ইউনিট।

সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে অক্সফোর্ড জানিয়েছে, করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পরই অ্যান্টিবডির মাত্রা শিখর ছুঁয়েছে। ১৮০ দিন পর তা অর্ধেক কমছে। ৩২০ দিন পর সর্বোচ্চ মাত্রার ৩০ শতাংশ অ্যান্টিবডি থাকছে শরীরে।

অবশ্য করোনাভাইরাসকে কাবু করতে ঠিক কী মাত্রার অ্যান্টিবডি প্রয়োজন তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। করোনার আলফা, বিটা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে যুদ্ধে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছে অক্সফোর্ড। আর তা সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেই ডোজ নেওয়ার পরই ১০ মাসের ব্যবধানে।

কোভিশিল্ডের ডোজ ব্যবধান বাড়ানো নিয়ে আগেই মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন অক্সফোর্ড ভাইরোলজিস্ট এবং এই ট্রায়ালের লিড ইনভেস্টিগেটর অ্যান্ড্রু পোলার্ড। তিনি বলেন, দু'টি ডোজের ব্যবধান বাড়িয়ে ইমিউনিটি বাড়ানো সম্ভব হলে অবশ্যই তা নিয়ে সবার চিন্তা করা উচিত। বিশেষত, কিছু দেশে যখন টিকার জোগান যথেষ্ট নয়।

আগে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিল, তাদের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ৭৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজের পরই সবোর্চ্চ ৮১ শতাংশ ইমিউনিটি গড়ে উঠছে। ভারতে এই মুহূর্তে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেকটাই স্তিমিত। তবে আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ায় করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটির মতো টিকা প্রাপকের ৮৮ শতাংশই কোভিশিল্ড পেয়েছে।

তাই অক্সফোর্ডের নতুন প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ভারত সরকার আবারো ডোজ ব্যবধান বাড়ালে কী হবে, উঠতে শুরু করছে সেই প্রশ্ন। সবেধন একটা ডোজেই ঝড় সামাল দেওয়া যাবে তো!

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন