আর্কাইভ থেকে আইন-বিচার

হলি আর্টিসানের পর ২৩টি ‘হাই রিস্ক অপারেশনে’; ৬৩ জঙ্গি নিহত

২০১৬ সালের হলি আর্টিসান হামলার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ। 

২০১৬ সালের হলি আর্টিসান হামলার পর কল্যাণপুর, নায়াণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ২৩টি ‘হাই রিস্ক অপারেশন’ পরিচালনা করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এসব অভিযানে ৬৩ জন জঙ্গি নিহত হয়।

সিটিটিসি তদন্ত শেষ করা দুটি মামলায় (হলি আর্টিসান এবং অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড) রায় হয়েছে যেখানে ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। সিটিটিসির অভিযানগুলোর জন্য জঙ্গিদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

বৃস্পতিবার (১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, হলি আর্টিসানে নৃশংস হামলার পর গত পাঁচ বছরে সিটিটিসি একের পর এক সফল অভিযানের মাধ্যমে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডকে কঠোরভাবে প্রতিহত করেছে। কল্যাণপুরে অপারেশন স্টর্ম-২৬, নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিট স্টর্ম-২৭, গাজীপুরের পাতারটেকে অপারেশন স্পেট-৮সহ সিটিটিসি ২৩টি হাই-রিস্ক অপারেশনে ৬৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। সিটিটিসি তদন্ত শেষ করা দুটি মামলায় (হলি আর্টিসান এবং অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড) রায় হয়েছে যেখানে ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই রাত ৮টা ৪০ মিনিট থেকে ৮টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে পাঁচজনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল গুলশানের ৭৯নং রোডের ৫ নম্বর বাড়ির হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর তারা এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়।

মামলার বিষয় উল্লেখ করে উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, গুলশানে হলি আর্টিসান সন্ত্রাসী হামলার গুলশান থানার মামলা সন্ত্রাসবিরোধী আইন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির তদন্ত সংক্রান্তে যাবতীয় কার্যাবলি সম্পন্ন করেন। তদন্তে সর্বমোট ২১ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে ১৩ জন আসামি বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হন।

তারমধ্যে ৫ ঘটনাস্থলে অপারেশন থান্ডারবোল্ট এ নিহত হয়। তারা হলেন- মোবাশ্বের (১৯), রোহান ইবনে ইমতিয়াজ (২০), নিবরাস ইসলাম (২৫), মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২), মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (২৬)।

হলি আর্টিসান পরবর্তী পুলিশি অভিযানে নিহত অপর ৮ জন আসামি হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী (৩৩), মুরুল ইসলাম মান (২৩), সরোয়ার জাহান মানিক (৩৫), তানভীর কাদেরী (৪০), বাশারুজ্জামান চকলেট (৩২), মেজর (অবঃ) জাহিদুল ইসলাম (৩৭), মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (৩২), রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তারেক (২০)।

তিনি বলেন, সিটিটিসি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর (Hard Approach) ও কোমলের (Soft Approach) সমন্বিত পদক্ষেপ অর্থাৎ Smart Approach গ্রহণ করেছে। Smart Approach-এর অংশ হিসেবে সিটিটিসি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করেছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পুলিশ সদস্য, কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী, চৌকিদার-দফাদার, জনপ্রতিনিধি, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, এনজিও সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ধর্মীয় পান্ডিত্যসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ (Religious Scholar), উগ্রবাদী/সন্ত্রাসী (জামিনপ্রাপ্ত), তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্য, সন্ত্রাসী ঘটনার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মশালা।

আদালতে খালাস পাওয়া মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানের বিরুদ্ধে সিটিটিসির তদন্তে কোনো গাফিলতি ছিল কি-না এবং তার নামটি তদন্তে ভুল করে এসেছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সহকারে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়। খালাস পাওয়া একান্ত আদালতের বিষয়।

দুটি জঙ্গি সংগঠনের নেতারা বিদেশে থেকে অনলাইনে সদস্য সংগ্রহ ও উগ্রবাদ ছড়াচ্ছেন। অপর সংগঠনের মূল নেতারা দেশে থেকেই তৎপর। প্রথম আলোর এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দুটি সংগঠন বলব না। আমি বলব দুইজন ব্যক্তি। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তারা দেশের বাইরেও অবস্থান করলে করতে পারে।

নব্য জেএমবিকে কারা তৈরি করল এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ওই সময়ে জেএমবির কয়েকজন সদস্যসহ জুন্নুদার তাওহীদ কানাডিয়ান প্রবাসী তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে এই নিও জেমবি তৈরি করে। পরবর্তীতে জেএমবির শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাদের (মামলার চার্জশিট ভুক্ত ও নিহত জঙ্গি) সমন্বয়ে নব্য জেএমবি নামে সংগঠন তৈরি করে। তারা নিজেদেরকে আইএস দাবি করে, এমন কোনো প্রমাণ আমরা পায়নি।

নব্য জেএমবিকে নিষিদ্ধ করা হবে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদেরকে নিষিদ্ধ করার কাজ প্রক্রিয়াধীন।

জঙ্গিদের কার্যক্রম দেশে বর্তমানে কোন অবস্থানে আছে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিটিটিসি ও পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানের ফলে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্কে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়েছি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন