পাহাড়ি অঞ্চলের নিরাপত্তায় পুলিশের নতুন ইউনিট
দেশের তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় যাত্রা শুরু করছে পুলিশের নতুন ইউনিট মাউন্টেন পুলিশ। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধীনে নতুন এই ইউনিটটি কাজ করবে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে। মাউন্টেন পুলিশের সদর দপ্তর ও কোম্পানির ক্যাম্প হবে তিন পার্বত্য জেলায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গেলো বছরের ২৫ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন পার্বত্য জেলায় আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরু করার প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। এর আগে পার্বত্য জেলায় ডিআইজি এপিবিএন এর কার্যালয় স্থাপনসহ তিন জেলায় তিনটি পৃথক আমর্ড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন সৃষ্টির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রস্তাব অনুমোদন হয়। ডিআইজি কার্যালয় ও তিনটি ব্যাটালিয়ন সৃষ্টির জন্য ২৬৫০ টি পদ সৃজনের অনুমতি চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গেলো বছরের ২৭ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এজন্য ২২৬০ টি পদ সৃজন করে। এরপরই আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়।
তিন পার্বত্য জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, জেলা পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। এবার পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমর্ড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন যাত্রা শুরু করছে। এজন্য ১৮ এপিবিএন রাঙামাটি, ১৯ এপিবিএন বান্দরবান ও ২০ এপিবিএন খাগড়াছড়ি গঠন করা হয়। এই তিনটি ব্যাটালিয়নের অধীনে তিন জেলায় মাউন্টেন পুলিশ কাজ করবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়নে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা প্রধান থাকবেন। ডিআইজি কার্যালয়ে দুজন এডিশনাল ডিআইজি এবং পৃথক তিন জেলা ব্যাটালিয়নে একজন করে মোট তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি থাকবেন। এই তিনটি ব্যাটালিয়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া ২ হাজার ২৬০টি পদের মধ্যে একজন ডিআইজি, পাঁচজন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ জন পুলিশ সুপার, ২১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২১ জন সহকারী পুলিশ সুপার, চারজন মেডিকেল অফিসার, ৭১ পরিদর্শক, ২৪৭ উপপরিদর্শক, ২৫৮ সহকারী উপপরিদর্শক, ৩৯৬ জন নায়েক এবং ১ হাজার ২২৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
এপিবিএনের ডিআইজি (অপারেশন্স) মাহবুব আলম বলেন, প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন ব্যাটালিয়ন সৃজন না করা না পর্যন্ত বিদ্যমান যে জনবল রয়েছে, সেখানে কিছু জনবল পূরণ করেই সেই ব্যাটালিয়নের কিছুটা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী রয়েছে সেখানে। তাদের সাথে সমন্বয় করেই, তাদের কিছু অস্ত্র এবং তাদের ট্রেনিং নিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় কার্যক্রম শুরুর একটা প্রক্রিয়া চলছে।
এপিবিএনের এডিশনাল ডিআইজি (অতিরিক্ত উপমহাপরির্শক) আলী আহমদ খান বলেন, বিভিন্ন অপরাধীদের ধরার জন্য বিশেষ করে মাদক, চোরাচালান বা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বা অন্য নিরাপত্তার বিষয়ে যেসব গোয়েন্দা তথ্য দরকার, তার জন্য গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে। মাউন্টেন পুলিশে সাইবার ক্রাইম সেকশন রয়েছে। যেখানে যেখানে জেলা পুলিশ যেতে পারে না, ওই সব জায়গায় মাউন্টেন পুলিশ ডিউটি করবে।
পার্বত্য এলাকার জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় এমন দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে থানা পুলিশের সদস্যদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব এলাকায় গাড়িতে যাতায়াতও নেই। স্থানীয় অপরাধের পাশাপাশি পাহাড়ে নানা ধরনের নিত্যনতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতা, মাদক ও চোরাচালান ঠেকানো স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে পুরোপুরি সম্ভব নয়।
পুলিশের মাউন্টেন ব্যাটালিয়নগুলো পাহাড়ের এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাম্প তৈরি করে দায়িত্ব পালন করলে পাহাড়ে নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে। তা ছাড়া পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি জনতার সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবেন এসব ব্যাটালিয়ন সদস্য। কার্যক্রম শুরুর আগে নতুন এই ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেয়া পুলিশ সদস্যদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ করে, পাহাড়ে প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার প্রশিক্ষণ।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই শেষে ছাড় পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সচিব কমিটিতে যাবে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর পৃথক তিনটি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরু হতে পারে।