আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

বাবার মরদেহ দাফন না করে সম্পত্তি ভাগ নিয়ে সন্তানের শালিস

বাবা হারিয়ে কেউ হয় উন্মাদ কেউ যেন দিশে হারা হয়ে পড়েন। যে বাবার হাত ধরে চলতে শিখেছি আজ সেই বাবা নেই। এক পরিবারের পাঁচ সন্তানের দেকা গেলো উলটো চিত্র।

বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর মরদেহ দাফন না করে সম্পত্তি ভাগের বিষয় নিয়ে শালিসে ব্যস্ত ৫ সন্তান। দীর্ঘ ২২ ঘন্টায় কোন সমাধান না আসার অবশেষে বৃদ্ধের মরদেহ ঠাই হয়েছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবাগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁচুরিয়া অম্বলপুর গ্রামে। মৃত ওই ব্যক্তির নাম ইয়াছিন মোল্লা (৮৫)।

স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে তার মৃত্যুর কিছুক্ষণ পর বিরোধপূর্ণ সম্পত্তির বিষয় নিয়ে শালিসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইয়াছিন মোল্লার সন্তানেরা। শালিসের মধ্যে নিহতের কয়েকসন্তান প্রশ্ন তোলেন তার বাবাকে অন্য ভাইয়েরা জমি লিখে নিয়ে হত্যা করেছে। দীর্ঘ ২২ঘন্টা পর দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে শালিসের মাধ্যমে সুরাহা হলেও স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ লাশটিকে উদ্ধার করে জিডি মূলে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

মৃত ইয়াছিন মোল্লার সন্তান বাবলু মোল্লা, ফুলবড়ু, রাবেয়া ও মমতাজ অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাবা ছোট ভাই রহমান মোল্লার কাছে থাকার সুযোগে তাকে ফুঁসলিয়ে তার সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন। এ নিয়ে রাজবাড়ী কোর্টে আমরা একটা মামলাও করি। সেই মামলায় গত ৫জুলাই কোর্ট বাবাকে হাজির হতে নির্দেশ দিলেও অসুস্থ্যতার কারণে সে উপস্থিত থাকতে পারেনি। অসুস্থতার খবরে আমরা তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে বললেও সে আমাদের কথা না শুনে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। আমাদের ধারণা ছোট ভাই রহমান ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে তাকে মেরে ফেলেছে।

এ প্রসঙ্গে মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছোট ছেলে রহমান মোল্লা বলেন, গত শুক্রবার হঠাৎ করে আমার বাবা অসুস্থ্য হলে তাকে গোয়ালন্দে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাই, এসময় ডাক্তার কিছু টেস্ট ও ঔষুধ লিখে দিয়ে বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে বলেন। আমি সেই মতে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাই। গত মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বাবা আরো বেশী অসুস্থ্য হলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ ঘটনা শোনার সাথে সাথেই আমি তাদের ঐখানে যাই এবং শালিসের মাধ্যমে লকডাউনের পরে সমাধানের কথা বলে স্ট্যাম্পে তাদের উভয় পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে মৃত ইয়াছিন মোল্লার দাফনের সিদ্ধান্ত নেই। এ সময় ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায়।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার এস আই মো. মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন