গাড়ি তৈরিতে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের যুবকদের কথা
ক্রিকেটে তো বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্থানের অনেক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ দেখেছেন। কখনো কি ভেবেছেন! আরও একটি শিল্প নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ দেখতে পারবেন?
যারা দেশ-বিদেশের অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রির খবরাখবর রাখেন তাদের কাছে নিশ্চয় এতোক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেছে, আজ কি নিয়ে কথা বলবো!
প্রায় ৪৫ বছর ধরে যুদ্ধবিধস্ত দেশ আফগানিস্থানে জন্ম নেয়া একদল তরুণ ও মোহাম্মদ রেজা আহমাদী (সিইও) এন্টপ অটোস্টুডিও-তে ডিজাইনড ও তৈরি করে ফেললেন আফগানিস্থানের প্রথম অটোমোটিভ ব্র্যান্ডের ভেহিক্যালস এবং সেটিকে তারা এন্টপ নামে নামকরণ করেছেন, যা সামনের বাম্পারে সিলভার রঙ্গে ইংরেজি ক্যাপিটাল ‘ই’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। তারা শুধু ভেহিক্যালস এর মধ্যে স্বীমাবদ্ধ থাকেননি, ডিরেক্ট বানিয়ে ফেলেছেন পুরোদস্তুর এক ল্যাক্সারি স্পোটর্স ভেহিক্যালস্। যা আমাদের চোখে প্রথম দেখায় মনে হবে ল্যাম্বরগিনি বা ফেরারির কোন নতুন মডেল। যেখানে তারা জাপানি টয়োটা ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশনসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ সংযোজন করেছেন সঙ্গে অন্যান্ন ব্র্যান্ডেরও যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করেছেন। কাবুলের রাস্তায় হয়ে গেলো এর এক প্রদর্শনী।
এন্টপ টিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এটি তৈরিতে তাদের পাঁচবছর কঠিন শ্রম দিতে হয়েছে এবং তারা ২০২৩ সালের কাতার এক্সিবিশনে প্রদর্শন করবেন। এতে করে আফগানিস্থানে খুলে যাবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
ঠিক এরকম এক ২৬ বছরের বাংলাদেশি তরুণের দেখা মিলেছিল ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে, যিনি ল্যাম্বরগিনি কাউন্টাস এর আদলে তৈরি করে ফেলেন লিমু বিল নামের গাড়িটি। এমনকি এই তরুণ জানতোই না কিভাবে গাড়ির বডি ডিজাইন করতে হয়, পেইন্ট করতে হয়। বলছি, ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়ায় জন্ম নেয়া লিপু নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কথা। প্রথম গাড়ি তৈরির পর সারাদেশে গাড়ি প্রেমীদের মাঝে এক ব্যাপক গণজোয়ার উঠে এবং ঠিক ৬ বছর পর লিপু গাড়ি তৈরির ব্যবসায় শুরু করে স্বপ্নের ল্যাম্বরগিনি দিঅ্যাবলোর (Lamborghini Diablo) আদলে দ্বিতীয় গাড়িটি তৈরি করে ফেলেন। এরপর একে ডাইহ্যাসটু স্যারেড (Daihatsu Charade), টয়োটা, হোন্ডা, ফেরারির আদলে বেশ কিছু গাড়ির তৈরি করেন। এছাড়াও ২২ ফুট দীর্ঘ লিমউনিস গাড়ি তৈরি করে বর্হিবিশ্বের তোলাপাড় করেন। ২০০৪ সালের দিকে লিপুকে নিয়ে বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখালেখি চলে এবং সঙ্গে আসতে থাকে নানান অফার। বাংলাদেশে নানানরকম বাধার সম্মুখীন হলে লিপু যুক্তরাজ্যে ঢাকা সিটি এক্সিবিশন শুরু করেন।
২০০৬ সালে বিশ্ববিখ্যাত ডিসকভারি চ্যানেল লিপুকে আট সপ্তাহের মধ্যে দুটি গাড়ি তৈরির জন্য বললে লিপু, বেড়নি ফিনম্যানকে সঙ্গে নিয়ে ৭ সপ্তাহে তৈরি করে ফেলেন। ফলে ২০০৭ সালে ডিসকভারি চ্যানেলই গাড়ি ট্রান্সমিশন নিয়ে ‘বাংলা বেঞ্জারস্’ নামে রিয়েলিটি শো শুরু করেন। পরিচিত হতে থাকেন সর্বমহলে। ২০১৫ সালে হিস্টোরি চ্যানেলে গাড়ি ট্রান্সমিশন নিয়ে ‘লিপু এন্ড বিটবুল’ নামে আরেকটি রিয়েলিটি শো শুরু হয়, যেখানে প্যাসেঞ্জার ও হেভি ভেহিক্যালস্ ট্রান্সমিশন করতে শুরু করেন।
আরেকটি বিষয় বলে রাখি, লিপুর তৈরি করা দ্বিতীয় গাড়িটি বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরেও প্রদর্শন করা হয়েছিলো। এতো এতো সম্ভাবনা থাকার পরেও আমরা পিছিয়ে পড়েছি বহুক্রোশ পথ দূরে। আজ আমাদের দক্ষ ম্যান পাওয়ার থাকার ফলেও আমরা ব্যবহার করতে পারতেছি। ফলে আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে বর্হিবিশ্বেও উপর এবং গাড়ি প্রেমীদের কাঙ্খিত গাড়িটি আমদানি করতে গুনতে হচ্ছে কয়েকগুন বেশ টাকা। তবে আমাদের দেশের অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও অগ্রসর হবে বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রালয়ধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলে বর্তমানে তা যেন থেমে যাওয়ার পথে। তবে সম্প্রতি হুন্দাই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক, কালিয়ারকৈর, গাজিপুরে তাদের মোটর সংযোজন কারখানা উদ্বোধন করায় যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশি কারখানায় সংযোজনকৃত হুন্দাই ব্র্যান্ডের গাড়িটি গ্রাহক কয়েক লাখ টাকা কমেই কিনতে পারবেন।
প্রতিবেদন: মোঃ মাসুম বিল্লাহ্