বোনের ধর্ষণ ও বাবা হত্যার বিচার চেয়ে দুই মামলা
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় বোনকে ধর্ষণ ও বাবাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে চন্দ্র বর্মণ (২৫) কে প্রধান আসামী করে ৪ জনের নামে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামীরা হলেন সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার, পলাশের বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মণ (৪৬), পলাশের বন্ধু কাজল বর্মণ (২৩) এবং পলাশের প্রতিবেশী দাদা ভবেন বর্মণ।
গেলো শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারী) রাতে ধর্ষিতার বড় ভাই বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় ধর্ষণ মামলা ও আটোয়ারী থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) বিকালে মামলার বিষয়টি জানা যায়। তবে এখন পর্যন্ত মামলা দুটির কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার এক কলেজ ছাত্রী (২১) কে প্রায়ঃশ উত্যক্ত করত পলাশ চন্দ্র বর্মণ নামে প্রতিবেশি এক তরুণ। এ নিয়ে পলাশকে সর্তক করা হলেও কর্ণপাত করেনি সে। পরে গত ১৭ই জানুয়ারী সন্ধ্যায় ওই কলেজ ছাত্রী তার চাচাতো ভাইয়ের বাসা থেকে ফেরার পথে পলাশ ও তার বন্ধু কাজল তার পথরোধ করে। পরে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে সুপারি বাগানে ধর্ষণ করে পলাশ। পরে ওই কলেজ ছাত্রীর চিৎকারে তার চাচা ছুটে এলে তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় ধর্ষক পলাশ। এসময় গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাম চোখে গুরুতর আহত হন কলেজ ছাত্রী। পরে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায়কে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করলে তার নির্দেশে গত ১৮ই জানুয়ারী রাতে পলাশের বন্ধু কাজল বর্মণের বাসায় শালিসে বসলে আসামীরা ধর্ষণের শিকার কলেজ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের গালাগাল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরে এ নিয়ে আবারো ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করা হলে তিনি তিন চারদিনের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কালক্ষেপন করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে কলেজ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা গত ২৪ জানুয়ারী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় গেলে তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন তিনি।
গেলো ১ ফেব্রুয়ারী দুপুরে স্থানীয় পরিষদে শালিসে বসার কথা থাকলেও আসামী পক্ষ শালিসে উপস্থিত হয়নি। এ নিয়ে সমাধানের জন্য চেয়ারম্যানকে তাগিদ দেয়া হলে তিনি নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে আসামী পক্ষের লোকজন ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের কুটূক্তি ও ব্যাঙ্গবিদ্রুপ শুরু করে। পরে মেয়ের ধর্ষনের বিচার না পেয়ে লজ্জায় ধর্ষিতার বাবা জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা এলাকায় একটি পাখুঁরী গাছের ডালে গলায় চাদর পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ধর্ষিতার বড় ভাই বলেন, প্রতিবেশি লোকজন ও আসামীদের নানা ধরনের কুটূক্তি, ব্যাঙ্গবিদ্রুপ, তীরস্কার মুলক কথাবার্তা এবং নানা ধরনের হুমকীতে আমার বোনের ধর্ষনের বিচার না পেয়ে লজ্জায় আমার বাবা আত্মহত্যা করেন।
মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, তারা আমাকে অভিযোগ দিলে আমি ১ ফেব্রুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদে তাদের বসার জন্য উভয় পক্ষকে বলি। কিন্তু সেদিন তাদের কেউই আসেনি।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। আসামীদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।