সরকার নির্ধারিত এলপি গ্যাসের দাম শুধু কাগজে-কলমে
কারওয়ান বাজারের এক দোকানের কর্মচারী রফিক। বাজারেই থাকেন, তাই রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাসই ভরসা। গেলো মাসে ১২ কেজির একটি এলপি গ্যাসের দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। সম্প্রতি এক লাফে ২৬৬ বেড়ে দাম হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। কিন্তু রফিককে কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়।
এ বিষয়ে রফিক বলেন, ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম আগে ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্তু এখন ১ হাজার ৭০০ টাকা নিচ্ছে।
রফিকের মহাজন বলেন, টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজে দেখেছি এলপি গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে কিনতে গিয়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা গুনতে হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে না। উল্টো দোকানিরা গালিগালাজ করেন।
আরেকজন ক্রেতা বলেন, আগের যে বোতল ছিল, সেটিতে গ্যাস ভরে দেয়নি। এতে আমার নতুন করে বোতল কিনতে হয়েছে। ফলে আমাকে ২ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে।
রফিকের মহাজনের তাও সিলিন্ডার বহনের খরচ লাগেনি। কিন্তু ভূতের গলির মমতাজ বেগমের বাড়তি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা গুনতে হয়েছে। একদিকে লাইনে গ্যাস না পেলেও বিল দিতে হয়। অন্যদিকে বর্ধিত দামের চেয়েও বেশি দামে এলপি গ্যাস কিনতে হচ্ছে।
মমতাজ বেগম বলেন, ১২ কেজির সিলিন্ডারের এলপি গ্যাস ১ হাজার ৮০০ টাকায় কিনেছি। আবার রিকশা ভাড়াসহ বহন খরচ আরও ২৫০ টাকা দিতে হয়েছে। এদিকে লাইনের গ্যাসও পাচ্ছি না। আবার সিলিন্ডারের গ্যাসের দামও বেড়ে গেছে। বাসার খাবার রান্নার গ্যাস বাবদ ৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে, আমরা তো সে দামে পাচ্ছি না। দোকানিরা বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত দাম বললে, দোকানিরা বলেন, হয় নেন, না হলে না নেন। এক্ষেত্রে আমরা এখন কী করব।
রাজধানীর বহু মানুষের অভিযোগ, ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০০ টাকায় তো নয়ই, কিছু ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা দিয়েও মিলছে না। যার সত্যতা পাওয়া গেল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে।
সেখানকার এক বিক্রেতা বলেন, আমরা ডিলারদের থেকে বেশি দামে কিনি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। দাম বেশি, তাই আমরা নিজেরাও তেমন একটা কিনছি না। আমরা কিনেছিই ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। তাহলে আমরা বিক্রি করব কত টাকায়?
এদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও (বিইআরসি) একই রকম বক্তব্য দিয়েছে। সংস্থাটির সচিব মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু নির্ধারিত বিষয় থাকে। সবকিছুর দাম কিন্তু প্রতি মাসে পরিবর্তন হয় না। শুধু বিউটেন ও প্রোপেনের দাম ওঠানামা করে। সৌদির সঙ্গে আমাদের কন্ট্রাক্ট প্রাইজের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হয়। প্রতি মাসের শেষের দিকে সৌদি আরামকো যে কন্ট্রাক্ট প্রাইজ ঘোষণা করে, সেটির ওপর ভিত্তি করেই দাম নির্ধারণ করা হয়।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, খুচরা পর্যায়ে কেউ যদি বাড়তি দাম রাখেন, তবে অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
খলিলুর রহমান খান বলেন, যদি কেউ বেশি দামে বিক্রি করে থাকে, তাহলে ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা নেবে। কিংবা জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনও ব্যবস্থা নিতে পারে। আর যদি বেশি দামে বিক্রি করার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে, সেক্ষেত্রে যদি ভোক্তারা আমাদের এখানে প্রমাণসহ আবেদন করেন তাহলে আমাদের কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স আছে, সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যদিও বাস্তবতা হলো অভিযান চলে, জরিমানাও হয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। ন্যায্য দাম রাখতে বললে উল্টো দোকানিদের কাছ থেকে বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয় ক্রেতাকে।