আর্কাইভ থেকে ক্রিকেট

দারুন জয়ে সিরিজে সমতা আনলো জিম্বাবুয়ে

তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের ছাড়াই সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে নেই লিটন দাস ও মোস্তাফিজুর রহমানও। এই চার তারকাকে ছাড়া খেলতে নেমে জয়ের জন্য ১৬৭ রানের লক্ষ্য পায় টাইগাররা। কিন্তু সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয়ের বন্দরে পৌঁছতে পারল না সফরকারীরা। ফলে সিরিজে সমতা ফেরায় টাইগারদের সিরিজ জয়ের অপেক্ষা আরও বাড়ল।

ওয়েসলি মাধভেরের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে ১৬৬ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও লুক জংওয়ের বোলিং ঝড় সামাল দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে টাইগাররা।

শুরুতেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার আগের দিন ১০২ রানের জুটি গড়লেও এ দিন ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাজঘরে ফেরেন তারা। মুজারাবানির করা ওভারে প্রথমে নাঈম (৫) বোল্ড হন। সৌম্য (৮) দৃষ্টিকটু শটে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন। প্রথম ম্যাচে জয় উপহার দিতে উদ্বোধনী জুটিতে ১০২ রান করেছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান।

১৭ রানে দুই উইকেট হারানো দলের দায়িত্ব নিতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে কাভারে  সিকান্দার রাজার তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন তিনি। দায়িত্ব নিতে পারেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও। মাসাকাদজাকে টেনে লং-অন দিয়ে মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার মুসাকান্দার হাতে ধরা পড়েন তিনি। ফলে ৫২ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

আসা যাওয়ার এই খেলায় মাহমুদউল্লাহকে অনুসরণ করলেন মেহেদী হাসান। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার তৃতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন তিনি। একই বোলারের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন নুরুল হাসান সোহান।

৬৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন অভিষিক্ত শামীম পাটোয়ারী। শুরু থেকেই মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এই নবাগত। তবে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ১৬তম ওভারে লুক জংওয়ের করা প্রথম বলে মাসাকাদজার হাতে ক্যাচ তুল দেন শামীম। তার আগে মাত্র ১৩ বলে ৩টি চার আর ২টি ছক্কায় ২৯ রান করেন তিনি।

এরপর দেখে শুনেই খেলছিলেন আফিফ হোসেন। সাইফউদ্দিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলে টেনডাই চাতারার শিকার বনে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার আগে ২৫ বলে সমান একটি করে চার আর ছক্কায় ২৪ রান করেন তিনি।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশর প্রয়োজন হয় ৩১ রানের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটি মোটেও অসম্ভব নয়। কিন্তু উইকেট যে আগেই শেষ করে ফেলেছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে মেরে খেলতে গিয়ে ১৫ বলে সমান একটি করে চার আর ছক্কায় ১৯ রান করে আউট হন সাইফউদ্দিন। টাইগারদের কফিনে শেষ  পেরেকটি মেরে দেন লুক জংওয়ে। ফলে এক বল বাকি থাকতে ১৪৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ দল। ২৩ রানের এই হারে সিরিজ ১-১ এ সমতা বিরাজ করছে। তাই শেষ ম্যাচটি পরিণত হলো অঘোষিত ফাইনালে।

জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও লুক জংওয়ে।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। এই ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশের শামীম পাটোয়ারীর। দেশের ৭১তম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পরেছেন এই অলরাউন্ডার।

ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল জিম্বাবুয়ে। মেহেদী হাসানের প্রথম বলেই লং-অফ দিয়ে ছয় মেরেছিলেন ওয়েসলি মাধভেরে। পরের বলে কাভার দিয়ে হয়েছিল চার। এরপরই আঘাত করেন মেহেদী হাসান। তাদিওয়ানশে মারুমানিকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান এই স্পিনার।

নিজের  প্রথম ওভারে সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। বাঁ-হাতি এই স্পিনারের বল তুলে মারতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টপ এজড হন রেগিস চাকাভা। কাভারের দিক থেকে ছুটে এসে ক্যাচ নিয়েছেন শরীফুল ইসলাম। সাজঘরে ফেরার আগে ৯ বলে ১৪ রান করের জিম্বাবুয়ের এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।

দুই উইকেট হারিয়ে আরও সতর্ক হয়ে ব্যাটিং করেছেন মাধভেরে ও মায়ার্স। ৪৬ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন তারা। তৃতীয় উইকেটে তাদের গড়া জুটিতে এগিয়ে যাচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। মাধভেরে ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক তুলে নেন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙেন শরীফুল। এই পেসারের বল কাট করতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দেন ডিয়ন মায়ার্স। বিদায়ের আগে ২১ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ২৬ রান করেন তিনি।

আজও সুবিধা করতে পারেননি সিকান্দার রাজা। শুরু থেকে নড়বড়ে মনে হওয়া রাজা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সৌম্য সরকারের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটকে কাটা পড়ে সাজঘরে ফেরেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। এরপর ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ওয়েসলি মাধভেরেকে বিদায় করেন শরীফুল ইসলাম। তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অফে আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার আগে ৫৭ বলে পাঁচটি চার আর তিন ছক্কায় ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি।

শেষ দিকে রায়ান বার্লের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে লড়াকু পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে। মাত্র ১৯ বলে সমান দুটি করে চার আর ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি। তাতে ৬ উইকেটে ১৬৬ রান তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশের হয়ে শরীফুল ইসলাম সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট শিকার করেন। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন