আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টি সিরিজও নিজেদের করে নিলো টাইগাররা

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৪ রান টপকিয়ে জয়ের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১৯৪ রানের বিশাল লক্ষ্য বেঁধে দেয় স্বাগতিকরা। জিততে হলে গড়তে হবে রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের সেই রান পাহাড় টপকে রেকর্ড গড়েই সিরিজ জিতে নিলো টাইগাররা।

অঘোষিত ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়েছে জিম্বাবুয়ে। আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। জবাবে ১৯৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন সৌম্য সরকার। তবে তাকে অনুসরণ করতে পারলেন না নাঈম শেখ। ব্লেসিং মুজারাবানির করা ফুল লেংথের বলটা জায়গায় দাঁড়িয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মিড-অফে লুক জংওয়ের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার।

শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে সতর্ক হয়ে ব্যাট করছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে জিততে হলে বলে বলে রান তুলতে হবে এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে লুক জংওয়ের পরপর দুই বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। কিন্তু তৃতীয় বলে আবারও তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন এই অলরাউন্ডার। বদলি ফিল্ডার মুসাকান্দার হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেয়ার আগে ১৩ বলে ২৫ রান করেন সাকিব।

৭০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার। ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে লুক জংওয়েকে বাউন্ডারি মেরে অর্ধশতক তুলে নেন সৌম্য। এটি তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি। তাদের ব্যাটে পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সৌম্যের ৬৩ রানের জুটি আর বাড়াতে দেননি লুক জংওয়ে। তার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে বদলি ফিল্ডার মুসাকান্দার তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৪৯ বলে ৯টি চার আর এক ছক্কায় ৬৮ রান করেন তিনি।

সৌম্যের বিদায়ের পর মাঠে নেমেই ব্যাটে ঝড় তোলেন আফিফ হোসেন। দুই ছক্কায় মাত্র ৫ বলে ১৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন আফিফ। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুজারাবানির অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়েছেন, উইকেটের পেছনে ডান দিকে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন রেগিস চাকাভা। ২৮ বলে ৩৪ রান মাহমুদউল্লাহর। জয় থেকে ৭ রান দূরে বাংলাদেশ।

তবে জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে অভিষিক্ত শামীম হোসেনের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ১৯৪ রান করে ৫ উইকেটে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। মাত্র ১৫ বলে ৬টি চারের মারে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম।

রোববার (২৫ জুলাই) হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সফরের শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ওয়েসলি মাধভেরে ও মারুমানি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই তারা তুলে নেয় ৬৩ রান। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে অবশ্য প্রথম সফলতার দেখা পায় বাংলাদেশ দল। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন মারুমানি। তার আগে ২০ বলে দুই চার ও দুই ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি।

এরপর ব্যাট হাতে নেমেই আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন রেগিস চাকাভা। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রেগিস চাকাভাকে সাজঘরে ফেরান সৌম্য সরকার। তার বলটা ফুল লেংথ থেকে স্লগ সুইপ করেছিলেন চাকাভা, সেটি গিয়েছিল মিডউইকেটে। পেছাতে পেছাতে বাউন্ডারির একেবারে ওপর গিয়ে সেটি ধরেছিলেন নাঈম। মোমেন্টাম ধরে রাখতে বাউন্ডারি পেরিয়ে যেতে হয়েছে তাকে, তবে এর আগেই বলটা ছুড়ে দিয়েছেন বাউন্ডারির ভেতরে। ছুটে গিয়ে সেটি নিয়েছেন শামীম হোসেন। ২২ বলে ৪৮ রান করে ফিরলেন চাকাভা।

চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমেই সৌম্য সরকারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। ফুল লেংথের বলের লাইন পুরোপুরি মিস করেছেন রাজা। বল তার প্যাডে লেগে ভেঙেছে স্টাম্প। তাকে রানের খাতা খোলার সুযোগ দেননি সৌম্য।

ইনিংসের শুরু থেকে অনবদ্য ব্যাটিং করে ফিফটি তুলে নেন ওয়েসলি মাধভেরে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের এ তারকা ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান সাকিব আল হাসান। তার স্পিনে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন মাধভেরে।

মাধভেরের বিদায়ের পর ব্যাট হাতে নেমেই সাইফউদ্দিনের ওপর চড়াও হলেন রায়ান বার্ল। সাকিবের মিসফিল্ডিংয়ে একটি চারসহ এ ওভারে হয়েছে তিন চার, এক ছয়। উঠেছে ১৯ রান। পরের ওভারে শরীফুল ইসলামকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েছেন ডিওন মায়ার্স। শেষ পর্যন্ত রায়ান বার্লের অপরাজিত ৩১ রানে রানের পাহাড়ে উঠে জিম্বাবুয়ে। ৫ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ১৯৩ রান।

বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের এটি সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে ২০১৩ সালে খুলনায় লাল-সবুজ দলের বিপক্ষে ১৮৭ রান সংগ্রহ করেছিল ব্রেন্ডন টেইলরের দল। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ম্যাচসেরা ইনিংসে (৫৯) গড়া সেই ম্যাচে ৬ রানে জয় পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে।

এ ছাড়া নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ১৬৮ রান। ওই ম্যাচেও জয় পেয়েছিল স্বাগতিকরা। চলমান সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও ১৬৬ রানের ইনিংস গড়ে ২৩ রানে জয় তুলে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। সেটিও অবশ্য চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ।

তবে দেশের মাটিতে ১৬৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দেয়ার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। সেটি অবশ্য ২০১৬ সালে খুলনার একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। এ ছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে সর্বোচ্চ ২০০ রান করারও রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। ২০০০ সালে ঢাকায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন ওই ম্যাচে ৪৮ রানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার জিম্বাবুয়ের মাঠে তাদের ১৯৩ রান টপকে সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ে জিতেছে ২৩ রানে। এ ম্যাচটি তাই অনেকটা অঘোষিত ফাইনালের মতো। দুই দলের জন্যই তিন ম্যাচের এই সিরিজ জিতে নেয়ার সুযোগ। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন