আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

যেভাবে বুঝবেন শিশু করোনায় আক্রান্ত

সর্বত্রই রাজ করছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে দাঁপিয়ে বেড়ানো এই ভাইরাসটির আতঙ্ক মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। শিশু থেকে বয়স্ক সবাকেই কাঁবু করছে এই করোনা। তবে করোনার প্রথম ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা না গেলেও, দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও।

এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশু এবং কিশোরদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এটি উদ্বেগের কারণ। তবে কয়েকটি কারণে এটি অবাক হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। এমনটাই বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস অল চিলড্রেন’স হসপিটালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. জোসেফ পারনো। 
 
ডা. জোসেফ পারনোর মতে, জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ কিশোর এবং তরুণ। তারা টিকা কর্মসূচির অংশ ছিল না। অথচ বর্তমানে হানা দিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো উচ্চ সংক্রামক করোনাভাইরাস। যা থেকে কোনো বয়সের মানুষই নিরাপদ নয়। শিশুদের কিছু হবে না, কোনো ঝুঁকি নেই- এমন ভাবা যাবে না।

তিনি জানান, শিশু করোনায় আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো অন্যান্য ভাইরাসের উপসর্গও হতে পারে। এ কারণে উপসর্গগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা

১. জ্বর বেশিদিন থাকছে কিনা তা দেখতে হবে।

২. কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা তাও লক্ষ্য রাখতে হবে। 

৩. শিশু খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছে কিনা সেদিকে খেয়াল দিতে হবে।

৪. শিশুর স্বাভাবিক অ্যাক্টিভিটি ঠিকঠাক আছে কিনা, সব খতিয়ে দেখতে হবে। 

৫. শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মনে হলে সতর্কতার প্রয়োজন আছে। 

৬. হালকা উপসর্গ থাকলে বাসায় শিশুদের আলাদাভাবে ৭ দিন দেখভাল করতে হবে। এক্ষেত্রে করোনা টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই।

৭. করোনায় আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুদের হয়তো উপসর্গ থাকে না। তবে বেশির ভাগ আক্রান্ত শিশু এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

৮. আক্রান্ত শিশুদের ক্লান্তি, দুর্বলতা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবারে স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।

৯. যেসব শিশু আগে থেকেই নানারকম অসুস্থতায় ভুগছে, যেমন মোটা বা স্থূলকায়, যাদের ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় ঘাটতিসহ অন্যান্য সমস্যা আছে, তাদের করোনা হলে মারাত্মক রূপ নিতে পারে। 

১০. প্রতিদিন ২-৩ বার শ্বাসপ্রশ্বাসের হার দেখুন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও প্রস্রাবের পরিমাণও দেখতে হবে।

১১. অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসককে জানাতে হবে।

১২. শিশুর কাজকর্মে দুর্বলতা প্রকাশ পেলে, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে, শরীরের কোথাও নীল হলে এবং বুক ভেতরে ঢুকে গেলে একটুও অবহেলা করা যাবে না। 

১৩. ঠোঁট নীল হওয়া ও বুক ভেতরে দেবে যাওয়ার মতো মারাত্মক উপসর্গ দেখামাত্র শিশুকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে জরুরি চিকিৎসা দিতে হবে।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শিশুর উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়াতে নিষেধ করেছেন ডা. পারনো।  

তিনি বলেন, জ্বর এলে ৪-৬ ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল সেবন করাতে হবে। গলা ব্যথা ও কাশি থাকলে গলা প্রশান্তি দিতে পারে এমন কিছু করতে হবে। এর জন্য লবণপানির গড়গড়া। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দুই/তিন চা-চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করাতে পারেন। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন পানি পান করান। ডাবের পানিও পান করাতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাবেন না।

এএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন