আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

সাত দিনে ৯০ ভাগ নাগরিককে টিকা দিয়েছে ভুটান

মাত্র সাত দিনে ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে করোনা টিকার আওতায় এনেছে ভুটান। মঙ্গলবার এ দাবি করেছে হিমালয় রাষ্ট্রটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব অ্যামেরিকা জানায়, গেল এপ্রিলে প্রায় সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগের খবর দিয়ে চমকে দিয়েছিলো প্রায় আট লাখ জনসংখ্যার ছোট দেশ ভুটান। তবে ভারত সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সঙ্কটে পড়ে যায় ২য় ডোজ নিয়ে।

ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত আট লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট দেশটিতে ২০ জুলাই থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়। ইউনিসেফের মতে, এটি সম্ভবতঃ পুরো মহামারি সময়কালের সবচেয়ে দ্রুত টিকা কার্যক্রম।

গেল এপ্রিলে ভারতের কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পাবার পর ভুটান সরকার বলেছিল, যে পরিমাণ টিকা পাওয়া গেছে সেই পরিমাণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এটি ওই সময় সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। তবে কয়েক মাসের মধ্যে টিকার সংকটে পড়ে ভুটান। কারণ ভারত নিজ দেশে ক্রমবর্ধমান করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে টিকা রপ্তানি থামিয়ে দেয়।

গেল সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতিসংঘের কোভাক্স কর্মসূচীর আওতায় পাঁচ লাখ মডার্না টিকা পায় ভুটান। এতে আবারো টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। কোভাক্স কর্মসূচীর আওতায় গাভি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন এর সহায়তায় ফাইজারের আরও পাঁচ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়। গেল দুই সপ্তাহে ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আরও চার লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পায় ভুটান।  এর ফলে টিকাকরণে উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেলো ভুটান।

বহু পশ্চিমা দেশ এখনো তাদের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার হিসেবে পিছিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, ভুটানের জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে কাজটি সহজ হয়েছে। তবে দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জোরালো এবং কার্যকর বার্তা, প্রতিষ্ঠিত হিমায়ণ পদ্ধতি এতে অনেক সহায়ক হয়েছে।

ভুটানের ১২০০ টিকা কেন্দ্রে তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী টিকা কার্যক্রমে অংশ নেয়। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের টিকা নিশ্চিত করেছে তারা। চিকিৎসা পেশাজীবীদের দিয়ে পরিচালিত ভুটান সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাই চিকিৎসক। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ফেসবুকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাতে করোনাভাইরাস ও টিকা সম্পর্কে জনগণের প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। এছাড়া টিকা সম্পর্কে যাদের মধ্যে শঙ্কা ছিল তাও দূর হয়েছে।

প্রথম থেকেই টিকার পক্ষে কথা বলেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটায় টিশেরিং এবং রাজা জিগমে খেসার নামগাইল ওয়াংচুক। এতে করে মানুষের মধ্যে আশংকা কেটেছে। টিকা কার্যক্রম জোরদার ও মানুষকে সচেতন করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করেছেন ভুটানের রাজা।

মাত্র আট লাখ জনসংখ্যার দেশ হিসেবে সুবিধা পেলেও ভুটানের স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতারও প্রশংসা করছে জাতিসংঘ। ভুটানে ইউনিসেফ প্রতিনিধি ডাঃ উইল পার্কস বলেন, ভুটানের সফল টিকা কার্যক্রমের সহায়ক আরেকটি বিষয় হচ্ছে দেসাপ নামের নাগরিক স্বেচ্ছাসেবীদের নেটওয়ার্ক। দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস টিকা, তথ্য বিভ্রাট দূর করা, করোনা পরীক্ষা, এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে টিকা পৌঁছানো এবং মানুষকে সচেতন করতে কাজ করেছে প্রায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী।

ভুটানের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যতিক্রম। টিকা কার্যক্রম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছে, বিশ্বের ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকা অনুদান বাড়ালে সরকার এবং সম্প্রদায় কিভাবে তা সফল করতে পারে তা বোঝা যায়।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন