চন্দ্রাভিযানে দুইবার ব্যর্থ হয়েছিল ভারত

মহাকাশে ইতিহাস গড়ল ভারতবাসী। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চাঁদের কুমেরু জয় করল ভারত। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যেন হাতের মুঠোয় চাঁদ পেল ভারত। চাঁদের মাটি ছুঁতে ৪০ দিনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয় চন্দ্রযান-৩।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চন্দ্রজয়ের এই খবর প্রথম প্রকাশ করেন। উচ্ছ্বসিত মোদি বলেন, ভারত এখন চাঁদে। টিম চন্দ্রযান এবং বিজ্ঞানীদের আমার শুভেচ্ছা।

ভারত এর আগেও দুইবার চন্দ্রাভিযানের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল সেসব অভিযান। চন্দ্রযান-৩ চাঁদের অভিমুখে ভারতের তৃতীয় অভিযান এবং এটি সফল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এই অভিযান প্রমাণ করেছে, অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া হলে তা সাফল্য এনে দেয়। ইতিহাস গড়া এই অভিযানের চূড়ান্ত মুহূর্ত ইউটিবে সরাসরি সম্প্রচার করে ইসরো।কেন বিক্রমের অবতরণের জন্য বুধ সন্ধ্যাকেই বেছে নেন ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

ভারতের এই চন্দ্রযান চাঁদ স্পর্শ করার পর পরই ইসরোর বিজ্ঞানীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এর পর দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ অনলাইনে এবং রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেন।
ল্যান্ডার বিক্রমের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ১৯ মিনিট। ভারতের আগে মাত্র তিনটি দেশ চাঁদ স্পর্শ করেছে। দেশগুলো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন।

ইসরো বিজ্ঞানীদের দাবি, চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণ ঘটবেই। আর এর জন্য ২৩ আগস্ট তারিখটিও খুব সাবধানে বেছে নিয়েছে ইসরো। চন্দ্রলোকে অবতরণের পর ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান তাদের বাকি অভিযান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৌরশক্তি ব্যবহার করবে। এ দিকে, চাঁদের এক মাস হয় পৃথিবীর হিসাবে ২৮ দিনে। এক চান্দ্রমাসে টানা ১৪ দিনব্যাপী রাত আর ১৪ দিনব্যাপী দিন থাকে। তাই চন্দ্রযান যদি এমন সময়ে অবতরণ করে যখন চাঁদ অন্ধকারে ডুবে থাকবে, তা হলে, এটি কাজ করবে না। তাই সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই ল্যান্ডার এবং রোভারটি চাঁদের বুকে নামাতে চেয়েছিল ইসরো। ইসরো হিসাব কষে দেখেছে ২২ আগস্ট চাঁদের রাত্রিযাপন শেষ হচ্ছে।

২০১৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভারের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এই রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।

বুধবার ভারতের সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র গঙ্গা নদীর তীরে শিশুরা জড়ো হয়ে নিরাপদ অবতরণের জন্য প্রার্থনা করে। বেশ কয়েকটি জায়গায় মসজিদে মোনাজাত আয়োজন করা হয়। রাজধানী নয়াদিল্লিতে গুরুদুয়ারা নামে পরিচিত একটি শিখ মন্দিরে পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি চন্দ্রযানের জন্য প্রার্থনা করেন।

 

Recommended For You

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version