২৪০ ডিজিট চেপে রিচার্জ করতে হচ্ছে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার

রিচার্জ

বিদ্যুৎ খাতের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকার ২০১৫ সালে প্রি পেইড মিটার সিস্টেম চালু করে। এ সিস্টেমের ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই অনলাইনে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছে। এতে যেমন শতভাগ বিল আদায় নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না।

তবে বিদ্যুত বিল পরিশোধে নতুন ভোগান্তি দেখা গেছে টোকেন সিস্টেমে। বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০ ডিজিটের একটি টোকেন ফোনে বার্তা আকারে আসে। সেই টোকেন নম্বরটি মিটারে প্রবেশ করালে রিচার্জ সম্পন্ন হয়।

কিন্তু ২০ ডিজিটের এমন টোকেন ১০ থেকে ১২টি করে গ্রাহকের কাছে আসছে। সংখ্যায় যা দাঁড়ায় ২০০ থেকে ২৪০টি শব্দ। রিচার্জ সম্পন্ন করতে সবগুলো সংখ্যা মিটারে প্রবেশ করাতে হয়। যা বেশ ভোগান্তি বলে জানাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বিইআরসি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন- এই তিন পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল। মূলত তখনও এ সমস্যা হয়েছিল।

সবশেষ চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানো হয়। এরপর থেকে সমস্যাটা আবার সামনে আসে। বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সার্ভারে আপডেট করতে গিয়ে এ সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কথা হয় ভুক্তভোগী কবির হোসেনের সঙ্গে। গাজীপুর সদরে তিনি বসবাস করেন। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ করতে গিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কার্ডে টাকা ভরার পর ফোনে টোকেন নম্বর আসে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ২০ ডিজিটের ১২টা টোকেন এসেছে। অর্থাৎ ২৪০টি সংখ্যা। আমাকে বাধ্য হয়েই সবগুলো সংখ্যা সঠিকভাবে বসিয়ে রিচার্জ কমপ্লিট করতে হয়েছে। যা চরম একটা ভোগান্তি।

একই ভোগান্তির কথা জানালেন চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করলে আসতো ২০ ডিজিট, আর এখন আসছে ১৮০ ডিজিটি! এতগুলো সংখ্যা চেপে রিচার্জ করা একটা ভোগান্তির বিষয়। বারবার ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

একই কথা বলেন সাভারের ধামরাইয়ে বসবাসকারী রাকিব সিদ্দীকি। তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময়ই এমন ১০ থেকে ১২ টা  টোকেন আসে। যার সবগুলো চেপে মিটার রিচার্জ করতে হয়। আমি ভাবলাম এ সমস্যা কি শুধু আমারই হয় কী-না। পরে দেখলাম না, অনেকেরই এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে যদি এমন সংখ্যা চাপতে হয়, তাহলে ডিজিটালাইজড করে লাভ কী।

ভুক্তভোগীরা জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান দিতে পারেনি। টেকনিক্যাল ইস্যুতে এমনটা হয়ে থাকে বলে জানানো হয়। অগত্যা ২০০ শব্দ চেপেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন গ্রাহকরা।

এদিকে চলতি মাসে দাম বাড়ানোর পর গত ১৮ জানুয়ারি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজপাডিকো) পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে প্রথমবার রিচার্জের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বাতি লাইন আসবে। যা বিগত সময়েও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পর এসেছিল।

রিচার্জের বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হলে গ্রাহকদের ওজপাডিকোর কল সেন্টারে (১৬১৭৭) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রি-পেইড মিটার বিষয়ক নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম  বলেন, যখন বিদ্যুতের ট্যারিফ বা মূল্য চেঞ্জ হয় তখন টোকেনের এই সমস্যাটা হয়। সার্ভার থেকে মিটারে তথ্য জমা দিতে গেলে এতোগুলো টোকেন আসে। এই প্রবণতা আবাসিক গ্রাহকপর্যায়েই বেশি। কারণ এই খাতে স্লাবের সংখ্যা বেশি।

তিনি বলেন, আবাসিক গ্রাহক শ্রেণির ছয়টি ধাপ আছে। (০-৫০ ইউনিট, ০-৭৫ ইউনিট, ৭৬-২০০ ইউনিট)। এই সবগুলো স্লাব বা ধাপের জন্য দশ-বারোটা টোকেন আসে। এটা একটা সফটওয়্যারগত ইস্যু। অনেক গ্রাহক আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। অনেকে বিষয়টা বোঝেন, অনেকে বুঝতে চান না। আমরা ইতোমধ্যেই সফটওয়্যারগত এই সমস্যাটা ঠিক করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যা প্লানিং কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই পল্লী বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য যেসব সংস্থা যেমন ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকো, বিপিডিসি ইত্যাদির প্রিপেইড মিটার রিচার্জ সিস্টেমের এসব ভোগান্তির নিরসন হবে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে গত বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত মোট বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছেন ৫১ লাখ ৭ হাজার ৪৫২ জন। সে হিসাবে দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছে।

দেশে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৯১, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১৩ লাখ ১০ হাজার ৫৬৪, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৯, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ৬ লাখ ১৪ হাজার ২০৫, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯২৩ ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ৫ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ছয়টি প্রকল্প চলছে।

Recommended For You

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version