আর্কাইভ থেকে ইউরোপ

উদ্ভিদের মাধ্যমে খনিজ উপাদান উত্তোলনের চেষ্টা

মুঠো ফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির ইঞ্জিনের মতো অনেক হাইটেক যন্ত্রপাতি তৈরি করতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োজন হয়৷ জার্মানিতে কয়েকটি উদ্ভিদের মাধ্যমে মাটি থেকে ওই সব উপাদান সস্তায় সংগ্রহ করার অভিনব চেষ্টা চলছে৷   ফ্রাইব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদের মাধ্যমে খনিজ উপাদান উত্তোলন প্রকল্পের উদ্যোক্তা হলেন জীববিজ্ঞানী ড. অলিভার ভিশে৷

জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের ফ্রাইব্যার্গ শহরের এক বাগানে এলোমেলোভাবে সাজানো গাছগুলোর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে৷ সেগুলো খুবই ভেবেচিন্তে বাছাই করা হয়৷

জীববিজ্ঞানী ড. অলিভার ভিশে বলেন, আমরা এখানে যা করছি তার নাম ফাইটোমাইনিং অর্থাৎ গাছপালার খনি৷ এর অর্থ ভুট্টার মতো সাধারণ গাছের সাহায্যে মাটি থেকে জার্মেনিয়াম, রেয়ার আর্থ, গ্যালিয়াম, তামা, দস্তার মতো লাভজনক উপকরণ আহরণ করা।

গ্রীষ্মকালজুড়ে ভুট্টার গাছ কতটা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তা এখন পরখ করার পালা৷ কারণ, এবার শস্য তোলা হচ্ছে৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে অলিভার ভিশের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ তবে প্রশ্ন হলো, গাছপালা কেন খনির ভূমিকা পালন করবে। ভুট্টার ক্ষেত্রে প্রকৃতির একটি ত্রুটি কাজে লাগানো হচ্ছে৷

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ড. ভিশে বলেন, ভুট্টা আসলে সিলিকন গ্রহণ করতে চায়৷ সামগ্রিকভাবে ঘাস হলো সিলিকন অ্যাকুমুলেটর৷ মানে ঘাস মাটি থেকে সিলিকন শুষে নিয়ে তাকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে৷ ঘাসের পাতায় সেই সিলিকন জমে ক্ষুদ্র পাথরের মতো বস্তু সৃষ্টি হয়৷ সেই ঘাস পশুপাখি খেতে এলে সুরক্ষা দিতে পারে পাথরগুলো। বিশেষ পরিবহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিলিকন গ্রহণ করা হয়৷ প্রকৃতির খামখেয়ালির দৌলতে ওই প্রক্রিয়া সিলিকন ও জার্মেনিয়ামের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না৷

পরীক্ষামূলক বাগানে গাছপালার এমন এলোমেলো বিন্যাসের কারণ তো জানা গেল৷ ভুট্টার কাজ জার্মেনিয়াম আহরণ করা৷ সেই কাজ করে বাজরাও৷ অন্যদিকে নিজস্ব পাতা ও ডালপালায় রেয়ার আর্থ জমা করে সূর্যমুখী ও বকহুইট৷

তবে এসব উপাদানের কেন প্রয়োজন হয়? বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক গোষ্ঠীর ১৬টি উপাদানকে রেয়ার আর্থ বলে। মোবাইল ফোন, এলসিডি স্ক্রিন থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎ প্লান্টেও এগুলো ব্যবহার করা হয়৷

মোবাইল ফোন, ক্যাবেল বা নাইট ভিশন ডিভাইসের মতো হাইটেক পণ্যে জার্মেনিয়াম থাকে৷ জার্মেনিয়াম খুবই দামী উপাদান৷ বর্তমানে এক কিলোগ্রামের দাম প্রায় ২,০০০ ইউরো৷ আরও সস্তার কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন উপাদান সংগ্রহের চেষ্টা তাই মোটেই বিস্ময়কর নয়৷

এভাবে গোটা প্রক্রিয়া চলে৷ ভুট্টা বিভ্রান্ত হয়ে শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে সিলিকনের বদলে জার্মেনিয়াম যোগাড় করে৷ এরপর জার্মেনিয়াম পাতা পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ সেখানে সিলিকনের মতো জার্মেনিয়ামও জমা হয় কোষের প্রাচীরে৷ একই প্রক্রিয়ায় জার্মেনিয়াম সংগ্রহ করে জোয়ারও৷ অন্য এক কৌশল প্রয়োগ করে সূর্যমুখী ও বাকহুইট। স্বাস্থ্যকর এই শস্যের মাটি থেকে রেয়ার আর্থ সংগ্রহ করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে৷

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন